শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের পর নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে এখন সুনশান নীরবতা। প্রতিদিন ভোর থেকে শ্রমিকদের পদচারণায় মুখরিত থাকলেও গতকাল বুধবার একেবারই ফাঁকা ইপিজেড এলাকা। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ইপিজেডের মূল ফটকসহ বিভিন্ন দিকে জোরালো অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
কয়েকদিন থেকে ২৩ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করে আসছে উত্তরা ইপিজেডের এভারগ্রিন বিডি নামের একটি পরচুলা তৈরির কারখানার শ্রমিকরা। শ্রমিক অসন্তোষ ঠেকাতে গত সোমবার রাতেই কারখানা ছুটি ঘোষণা করে এভারগ্রিন কর্তৃপক্ষ। গত মঙ্গলবার সকালে কাজে এসে কারখানা বন্ধের খবরে উত্তেজিত হয়ে ইপিজেডের সামনের সড়ক ও মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে অন্যান্য কারখানার শ্রমিকদেরও ভেতরে ঢুকতে বাধা দেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ইপিজেডের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এলে শ্রমিকদের সাথে সংঘর্ষ বাধে। এতে অন্তত আট শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন এবং হাবিব নামের এক শ্রমিক মারা যান। এরপর উত্তেজনা আরও বেড়ে গেলে বেপজা কর্তৃপক্ষ ইপিজেডের সব কারখানা সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছে।
এদিকে ইপিজেড এলাকায় এখন সুনশান নীরব পরিস্থিতি বিরাজ করছে। স্থানীয় বাসিন্দা আজিমুল ইসলাম বলেন, ‘গতকালের ঘটনার পর এখানকার পরিস্থিতি উত্তেজিত ছিল। তবে সেনাবাহিনী-পুলিশ সবাই মিলে নিয়ন্ত্রণে এনেছে। আজকে (গতকাল) সব কোম্পানি বন্ধ রাখা হয়েছে। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যাগুলোর সমাধান করে ইপিজেড চালু করে দেওয়া হোক।’
আরেক বাসিন্দা দুলাল হোসেন বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েকদিন ধরেই দেখছি কিছু শ্রমিক আন্দোলন করছে। কিন্তু গতকাল হঠাৎ করে কী হয়ে গেল, এত ঝামেলা আমরা বুঝতেই পারলাম না। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে, সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করছে সবকিছু। আমরা শুনছি ইপিজেড বন্ধের একটা পাঁয়তারা চলছে। যদি এ রকম কিছু থাকে আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় জীবন দিতেও রাজি।’
ইপিজেড মোড়ে দোকান করেন রইছুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কোম্পানিগুলো বন্ধ থাকায় বেচাবিক্রি একদম নেই বললেই চলে। কারণ এখানে যারাই আসে, ইপিজেডের উদ্দেশ্যে আসে।’
বেপজা’র নির্বাহী পরিচালক আব্দুল জব্বার বলেন, যিনি টাকা নিবেন আর যিনি টাকা দিবেন কোম্পানির এই দুটি ব্যক্তির মধ্যে যোগাযোগে ঘাটতি ছিল। ফলে শ্রমিক ও মালিক পক্ষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়ে এই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে। মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানে আমাদের বৈঠক চলছে।
এ বিষয়ে নীলফামারী জেলা পুলিশ সুপার এ.এফ.এম তারিক হোসেন খান বলেন, নিহত হাবিবের পরিবার জানিয়েছে, তাদের কোনো দাবি-দাওয়া নেই, তাই ময়নাতদন্ত ছাড়াই যেন তাদের কাছে লাশ প্রদান করা হয়। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, শ্রমিকদের যেগুলো যৌক্তিক দাবি সেগুলো অচিরেই প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন করবে বলে আমাদের আশ^স্ত করেছে। আমরা ইপিজেডে একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি, এই কমিটি খুঁজে দেখবে এখানে ম্যানেজমেন্টের কোনো গাফিলতি আছে কি না।
তিনি আরও বলেন, আপাতত ইপিজেডের সব কারখানা বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে ইপিজেড কর্তৃপক্ষ এটি খুলে দেওয়ার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এদিকে শ্রমিক হত্যার ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। গতকাল বুধবার জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানায়, আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের ওপর কোনোরকম মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া যাবে না। গুলির নির্দেশদাতাকে শনাক্ত করে তদন্তসাপেক্ষে বিচারের আওতায় আনা ও নীলফামারী জেলার কোথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মারণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে না বলে দাবি জানান দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আবু সাঈদ লিওনসহ জেলার নেতৃবৃন্দরা।