কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগে প্রবাসীর স্ত্রীকে রশি দিয়ে বেঁধে পিটিয়েছেন বজলুর রশিদ নামের এক ইউপি সদস্য। এ ঘটনার ২ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিওফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বজলুর রশিদ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য এবং শ্রীপুর ইউনিয়নের যুবলীগের সহসভাপতি।
গত ১৬ অক্টোবর রাতে উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের গোপালনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটলেও গত মঙ্গলবার রাত থেকে ভিডিওটি ভাইরাল হয়। ভাইরাল ভিডিওফুটেজে দেখা যায়, একজন নারীকে রশি দিয়ে দুই হাত বেঁধে লাঠিপেটা করছেন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার বজলুর রশিদ। ওই নারীর পাশে একজন পুরুষকে বেঁধে রাখা হয়েছে। পিটুনির চোটে ওই নারী চিৎকার করছেন।
নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ মেম্বার বজলুর রশিদের ভাতিজা মালদ্বীপপ্রবাসীর স্ত্রী। মারধরের পর ওই নারীকে তার প্রবাসী স্বামীর কাছ থেকে তালাক নিয়ে পার্শ্ববর্তী তারাপুষ্করুণী গ্রামের বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। বিল্লাল একই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি।
স্থানীয় লোকজন জানায়, নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর সঙ্গে বিল্লাল হোসেনের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগে ১৬ অক্টোবর রাতে দুজনকে আটক করে স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে ইউপি সদস্য বজলুর রশিদ উপস্থিত হয়ে ওই নারীকে লাঠিপেটা করেন। পরদিন ১৭ অক্টোবর সকালে ইউপি সদস্য বজলুর রশিদের নেতৃত্বে সালিশ-বৈঠক হয়। সালিশের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ওই নারীকে বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে ইউপি সদস্য বজলুর রশিদ বলেন, ‘ওই মহিলা আমার ভাতিজার স্ত্রী। পার্শ্ববর্তী তারাপুষ্করুণী গ্রামের যুবক বিল্লাল মিয়ার সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক অনেক দিন ধরে। ১৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে স্থানীয় গ্রামবাসী তাদের অনৈতিক কাজে হাতেনাতে আটক করে আমাকে খবর দেয়। আমি সেখানে উপস্থিত হয়ে ওই নারীকে কয়েকটি আঘাত করি। পরদিন ১৭ অক্টোবর শুক্রবার স্থানীয় লোকজনসহ সালিশ করে ৫ লাখ টাকা কাবিনে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিল্লাল এর আগে বিবাহিত ছিলেন। তার সংসারে স্ত্রী ও চারটি মেয়ে রয়েছে। নির্যাতনের শিকার প্রবাসীর স্ত্রীও দুই সন্তানের মা।
গতকাল দুপুরে ঘটনা সম্পর্কে বিল্লাল মিয়া বলেন, ‘আমি কেবল টিভি ব্যবসায়ী। কেবলে সমস্যার কারণে ওই নারী টেলিভিশন দেখতে সমস্যা হচ্ছে বলে আমাকে খবর দিলে আমি তার ঘরে যাই। পরে কিছু লোকজন আমাদের দুজনকে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে আটক করে ইউপি সদস্য বজলুর রশিদকে খবর দেয়। তিনি এসে আমাদের ব্যাপক মারধর করেন এবং পরের দিন জোরপূর্বক দুজনকে বিয়ে করিয়ে দেন।’
তবে নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ইউপি সদস্য কর্তৃক প্রবাসীর স্ত্রীকে নির্যাতনের একটি ভিডিও আমাদের নজরে এসেছে। এরই মধ্যে ভুক্তভোগী দুই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আমরা ভুক্তভোগী পরিবারকে সব ধরনের আইনি সহযোগিতা দেব। অভিযুক্ত ইউপি সদস্য বজলুর রশিদকে আটকের চেষ্টা চলছে।’