আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে ঋণচুক্তির ষষ্ঠ ছাড়ের আগে বাংলাদেশের শর্ত পূরণের অগ্রগতি ও সার্বিক অর্থনৈতিক পর্যালোচনায় ঢাকায় এসেছে একটি মিশন। আইএমএফের গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রোইকোনমিকসের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি আজ বুধবার থেকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে বৈঠক শুরু করছে। তারা প্রথম দিনে অর্থসচিবের সঙ্গে আলাদা উদ্বোধনী সভা করে মিশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরবেন। এরপর অর্থবিভাগের সামষ্টিক অর্থনীতি ও বাজেট শাখার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকটি শাখার সঙ্গে বৈঠক করবে মিশনটি। এই বৈঠকগুলোতে আইএমএফ বাংলাদেশ মিশন প্রধান ম্যাক্সিম ক্রিস্কোও উপস্থিত থাকবেন।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সামষ্টিক অর্থনীতি শাখার সঙ্গে বৈঠকে মধ্যমেয়াদি বার্ষিক প্রক্ষেপণ এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সূচক নিয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত আইএমএফকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে সরকার কী কী কাঠামোগত পরিবর্তন আনবে তা তুলে ধরা হবে। এদিকে বাজেট শাখার সঙ্গে বৈঠকে সার্বিক বাজেট বাস্তবায়ন তথা উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যয়, ভর্তুকি, স্থানীয় পর্যায়ে সুদ পরিশোধ, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় পরিস্থিতি উপস্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে বকেয়া ভর্তুকি পরিস্থিতি এবং ভর্তুকি কমানোর পাশাপাশি রেমিট্যান্সের বিপরীতে দেওয়া প্রণোদনা কমিয়ে আনার পরিকল্পনার বিষয়টি নিয়েও পর্যালোচনা হবে। মিশনটি আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির প্রথমার্ধে ষষ্ঠ কিস্তি ছাড় করার কথা ছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যে রাজনৈতিক সরকার আসবে, তারা আইএমএফের ঋণের শর্ত মানবে কি না, সেই নিশ্চয়তা না পেয়ে কিস্তির অর্থ ছাড় করতে রাজি নয় সংস্থাটি। তাই পরবর্তী কিস্তি আগামী মার্চ বা এপ্রিলের দিকে পাওয়া যেতে পারে। আইএমএফ আপাতত ষষ্ঠ কিস্তি স্থগিত রেখে ষষ্ঠ ও সপ্তম কিস্তি একসঙ্গে ছাড়তে চায়। এর আগেও তৃতীয় কিস্তির পূর্বশর্ত পূরণে বিলম্বের কারণে তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির অর্থ একসঙ্গে ছাড় করেছিল সংস্থাটি।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, ষষ্ঠ কিস্তি ছাড়ের জন্য রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়া প্রায় সব শর্তই পূরণ হয়েছে। তবে দাতা সংস্থাগুলো নিশ্চিত হতে চায় যে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কারমূলক পদক্ষেপগুলো নতুন রাজনৈতিক সরকারও বজায় রাখবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও আইএমএফকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে পরবর্তী সময়ে যে সরকারই আসুক না কেন, সংস্কার কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
আইএমএফ ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে। কিন্তু গত জুনে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি অনুমোদনের মাধ্যমে মূল ঋণের পরিমাণ ৮০ কোটি ডলার বাড়িয়ে ৫৫০ কোটি ডলার করা হয়। মোট আট কিস্তিতে এ অর্থ পাওয়ার কথা রয়েছে। এ পর্যন্ত আইএমএফের এই ঋণ প্রোগ্রাম থেকে মোট ৩৬০ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। মিশন সফর শেষে পরবর্তী কিস্তি নিয়ে একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন দেবে আইএমএফকে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন