ঢাকা রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫

সবার চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৫, ০৭:০১ এএম

বর্তমান সময়টি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ভাইরাল ফ্লু এবং অন্য জ্বরের প্রকোপ যেভাবে বাড়ছে, তা ২০১৮ সালের ভয়াবহ ডেঙ্গু মহামারির স্মৃতি আবারও সামনে আসছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এবং অনেককে শারীরিক জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে। অথচ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় পর্যাপ্ত বেড বা চিকিৎসক না থাকায় রোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়ছে। এ পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

সরকারির মতো বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় সিট না পাওয়ার অভিযোগ ক্রমেই বাড়ছে। মুগদা জেনারেল, ঢাকা মেডিকেল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) ও কুর্মিটোলাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোয় রোগী গিজগিজ করছে। ডেঙ্গু ও ভাইরাল জ্বরে আক্রান্তদের ভর্তির সংখ্যা এতটাই বেড়েছে, অধিকাংশ হাসপাতালকে বাড়তি ওয়ার্ড খুলে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এ বাড়তি চাপে চিকিৎসক ও নার্সদের রেশনিং করে কাজ চালাতে হচ্ছে, যা একদিকে স্বাস্থ্যসেবার মানকে প্রভাবিত করছে, অন্যদিকে স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপরেও বাড়তি চাপ তৈরি করছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, রোগীরা অনেক সময় দেরিতে হাসপাতালে আসছেন, যখন রক্তপাত বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হওয়ার মতো জটিলতা শুরু হয়। এতে রোগীকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে। তাই ডেঙ্গু বা ভাইরাল জ্বরকে হালকাভাবে না দেখে, জ্বর শুরু হলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার। সচেতনতার অভাবে রোগের গতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে, যা এডিস মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় বড় অন্তরায়।

এদিকে, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো রোগ ছড়ানোর পেছনে যেমন জলবায়ুর প্রভাব রয়েছে, তেমনি এর বিস্তারে নগর ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাও দায়ী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নিয়মিত মশা নিধন কার্যক্রম চালানো হলেও কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ। অনেক সময় অভিযোগ উঠছে, ফগার মেশিনে কার্যকর ওষুধ ব্যবহার না করার, কিংবা নির্দিষ্ট এলাকায় মশা নিধনে অবহেলার। ফলে ডেঙ্গুর প্রজননস্থল ধ্বংস না হয়ে বরং বাড়ছে মশার বিস্তার।

আমরা মনে করি, এ সংকট মোকাবিলায় সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিক বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহল সেই সঙ্গে বেসরকারি বিভিন্ন খাতকে সম্পৃক্ত করা। 

সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে অতিরিক্ত বেড এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসক-নার্স নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ ওয়ার্ড ও মেডিকেল টিম গঠন করা জরুরি। এডিস মশার প্রজননস্থল চিহ্নিত করে ধ্বংসে কার্যকর অভিযান চালাতে হবে। এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় জনগণের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। গণমাধ্যম ও সামাজিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে জনগণকে সচেতন করতে হবে, জ্বর হলে অবহেলা নয়, দ্রুত পরীক্ষা করানো এবং সঠিক চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে হবে। বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততা; বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে এ সংকটে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। রোগীর সেবা নিশ্চিত করতে সরকারি সহযোগিতার আওতায় সেবা সম্প্রসারণে তাদের ভূমিকা বাড়ানো জরুরি।

এ পরিস্থিতি এক দিনে তৈরি হয়নি, আর এর সমাধানও এক দিনে সম্ভব নয়। তবে এখনই যদি সমন্বিত পরিকল্পনা এবং যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। সঠিক চিকিৎসা পাওয়া দেশের প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার।  

আর এই অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান ও সমাজ সবারই এগিয়ে আসা একান্ত প্রয়োজন।