রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রিয়াজুল হক, যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২৫, ০১:২৫ এএম

শরীরের বিলাস সাময়িক, আত্মার প্রশান্তি অশেষ

রিয়াজুল হক, যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২৫, ০১:২৫ এএম

শরীরের বিলাস সাময়িক, আত্মার প্রশান্তি অশেষ

আমরা প্রতিদিন যা করি, তার অনেকটাই শরীরের সুখের জন্য। একটু ভালো খাবার, একটু আরাম-আয়েশ, একটু প্রশংসা, একটু বিলাসÑ সবকিছু যেন এই শরীরটাকে খুশি রাখার জন্যই। অথচ যেই শরীরের জন্য এত আয়োজন, এত অনিয়ম, এত অন্যায়Ñ সেই শরীরের ওপর আমাদের আসলে কি কোনো নিয়ন্ত্রণই আছে? এককথায় উত্তর- না, নেই।

একবার ভেবে দেখুন, আমাদের শরীরের ওপর যদি সত্যিই নিজেদের নিয়ন্ত্রণ থাকত, তাহলে কে না চাইত চিরযৌবন ধরে রাখতে? কেউ কি চামড়া কুচকে যেতে, মুখে ভাঁজ পড়তে, চুল-দাড়ি সাদা হয়ে যেতে দিত? কেউই দিত না। কিন্তু তাই তো ঘটে থাকে। কারণ শরীরের নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে নেই।

এই শরীরের জন্য আমরা অন্যের প্রাপ্য কেড়ে নিই, মিথ্যা বলি, ঘুষ খাই, প্রতারণা করি, অন্যের ক্ষতি করি। আমরা ভেবে নিই, শরীরের সুখই জীবনের সুখ। অথচ এই শরীরই একদিন কবরে যাবে, মাটির নিচে গলে যাবে। তবুও আমরা সেই পচা-গলা শরীরকে খুশি রাখার জন্য পাপের পাহাড় গড়ি।

কী অদ্ভুত!

যে শরীরকে আমরা প্রতিদিন সাজাই, সে শরীরকেই একদিন মানুষ এড়িয়ে চলে। যে মুখটিকে আমরা আয়নায় যতœ করে দেখি, সেই মুখই একদিন কেউ দেখতে চায় না। যে শরীরকে আমরা পাপের জ্বালানি বানাই, সেই শরীরই শেষমেশ নিথর হয়ে পড়ে থাকে।

মহান আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন বিবেক। এই একটিই আমাদের নিয়ন্ত্রণের আসল অস্ত্র। শরীরকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, কিন্তু শরীরের চাওয়া-পাওয়া নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আমাদের আছে। এই ক্ষমতাই মানুষকে পশু থেকে আলাদা করে রেখেছে। পশু শরীরের চাহিদার দাস, কিন্তু মানুষ তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ক্ষুধা লাগলে সবাই খেতে চায় কিন্তু সবাই অন্যের খাবার ছিনিয়ে নেয় না। রাগ হলে সবাই প্রতিক্রিয়া দেখাতে চায় কিন্তু সবাই হত্যা করে না। প্রলোভন এলে সবাই টান অনুভব করে কিন্তু সবাই পাপের পথে যায় না। এই যে সংযম, এটাই বিবেকের জয়।

শরীরের ক্ষমতা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয়ে যায়, কিন্তু আত্মার শক্তি বয়স বাড়ার সঙ্গে আরও পরিপক্ব হয়। একজন বৃদ্ধের হাঁটতে কষ্ট হয়, কিন্তু তার প্রজ্ঞা হয় তরুণদের পথপ্রদর্শক। একজন বৃদ্ধের হাত কাঁপতে থাকে, কিন্তু তার দোয়ার প্রভাব থাকে পাহাড়ের মতো দৃঢ়। এ থেকে বোঝা যায়, আসল শক্তি শরীরে নয়, আত্মায়। শরীর নষ্ট হবে, কিন্তু আত্মা অমর। তাই শরীরের জন্য অন্যায় করে আত্মাকে কলুষিত করা মানে নিজের মূল সত্তাকে ধ্বংস করে ফেলা।

আমরা অনেক সময় বলি, ‘আমার শরীর, আমার ইচ্ছা।’ কিন্তু মৃত্যু কি আমাদের ইচ্ছায় আসে? বার্ধক্য কি আমাদের অনুমতি নিয়ে আসে? রোগ কি আমাদের পছন্দ দেখে আক্রমণ করে?

না।

তাহলে কোন শরীরের জন্য আমরা এত অন্যায় করি, এত গর্ব করি? যে শরীরের ওপর নিজেরই নিয়ন্ত্রণ নেই, তার জন্য এত অহংকার, এত অন্যায়, এত লোভ!

আমরা যদি শরীরকে নয়, আত্মাকে বেশি যতœ করতে পারতাম, তাহলে সমাজটা এমন হতো না। অন্যায়, দুর্নীতি, হিংসা, লোভÑ এসবই শরীরের সুখের লালসা থেকে জন্ম নেয়। আর বিবেকের আলো নিভে গেলে মানুষ হয়ে যায় প্রলুব্ধ পশু।

আজকাল মানুষ শরীরের যতেœ ভীষণ ব্যস্ত, যেমন ডায়েট, ফিটনেস, স্কিন কেয়ার, জিম, ফেয়ারনেস ক্রিম ইত্যাদি অনেক কিছু। কিন্তু আত্মার যতœ কোথায়? বিবেকের ব্যায়াম কোথায়? যে মানুষ নিজের শরীরের চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সেই সত্যিকারের স্বাধীন। কারণ সে আর তার শরীরের দাস নয়। যে প্রলোভনে আটকে থাকে, সে আসলে মুক্ত নয়, শুধু নিজের চাহিদার শৃঙ্খলে বন্দি।

শরীরকে সাময়িক আনন্দ দেওয়া সহজ, কিন্তু আত্মাকে স্থায়ী শান্তি দেওয়া অনেক কঠিন। আর সেটাই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব। মহান আল্লাহ আমাদের সেই বিবেক দিয়েছেন, যার মাধ্যমে আমরা চাইলেই শরীরকে অন্যায়ের হাত থেকে বাঁচাতে পারি, আত্মাকে আলোর পথে রাখতে পারি।

মনে রাখা দরকার, যে শরীরের সুখের জন্য আমরা এত দৌড়ঝাঁপ করি, সেই শরীরের নিয়ন্ত্রণই আমাদের হাতে নেই। আজ যদি মৃত্যু এসে শরীরের নিশ্বাস বন্ধ করে দেয়, আমরা কিছুই করতে পারি না। তাহলে কেন সেই অনিয়ন্ত্রিত শরীরের জন্য অন্যের অধিকার কেড়ে নেই? শরীর মাটিতে মিশে যাবে, কিন্তু আত্মার হিসাব চলবে চিরকাল। তাই শরীরের সুখ নয়, আত্মার শান্তিই হোক জীবনের লক্ষ্য। কারণ সেই শান্তির মেয়াদ চিরস্থায়ী।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!