বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বহু মানুষ আজ সৌদি আরবের দিকে তাকিয়ে আছে নতুন জীবনের আশায়। ভালো বেতন, আধুনিক জীবনযাত্রা ও উন্নত কর্মপরিবেশÑ সব মিলিয়ে সৌদি আরব এখন প্রবাসী শ্রমবাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য। বর্তমানে দেশটি তাদের অর্থনীতিকে ভিশন ২০৩০-এর মাধ্যমে বৈচিত্র্যময় করতে কাজ করছে। পেট্রোলিয়াম নির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে এসে তারা বিনিয়োগ করছে নির্মাণ, তথ্যপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, পর্যটনসহ নানা খাতে। এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে হাজার হাজার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগÑ আর সেই সুযোগের চাবিকাঠি হচ্ছে কোম্পানি ভিসা।
কোম্পানি ভিসা কী
সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা হলো এমন একটি কর্মভিসা, যার মাধ্যমে বিদেশি কর্মীরা নির্দিষ্ট কোনো কোম্পানির অধীনে কাজ করতে পারেন। এই ভিসার বৈধতা, সুযোগ-সুবিধা ও নবায়ন সবকিছুই কোম্পানির দায়িত্বে সম্পন্ন হয়।
ভিসার প্রধান ধরনগুলো
ওয়ার্ক ভিসা: সাধারণ শ্রমিক ও কর্মচারীদের জন্য। প্রফেশনাল ভিসা; দক্ষ পেশাজীবীদের জন্য যেমন ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার বা আইটি বিশেষজ্ঞ।
বিজনেস ভিসা: ব্যবসায়িক সফর বা বিনিয়োগ সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত। ফ্যামিলি ভিসা: সৌদিতে কর্মরত ব্যক্তিরা পরিবারের সদস্যদের স্পনসর করতে পারেন।
আবেদন প্রক্রিয়া
কোম্পানি ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া প্রথমে জটিল মনে হলেও সঠিক তথ্য জানলে তা সহজ হয়ে যায়। অনলাইন জব পোর্টাল বা অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে উপযুক্ত কোম্পানি বেছে নিন। কোম্পানি থেকে লিখিত অফার লেটার সংগ্রহ করুন, যেখানে বেতন, কাজের সময় ও সুবিধাসমূহ উল্লেখ থাকবে। সাধারণত ১ থেকে ৩ মাসের মধ্যে ভিসা অনুমোদন মেলে।
বেতন ও সুযোগ-সুবিধা
সৌদি আরবে বেতন নির্ধারিত হয় কাজের ধরন, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। সাধারণ শ্রমিক ৪৫,০০০-৭৫,০০০, দক্ষ শ্রমিক ৫৪,০০০-৯০,০০০, সুপারভাইজার ৭৫,০০০-১২০,০০০, টেকনিশিয়ান ৬৬,০০০-১০৫,০০০, ড্রাইভার ৬০,০০০-৯৬,০০০, ইঞ্জিনিয়ার-১২০,০০০ ২১০,০০০, ডাক্তার- বিশেষজ্ঞ ১৫০,০০০ ৩০০,০০০ ম্যানেজার বা প্রশাসনিক কর্মকর্তা- ১৮০,০০০-৩৬০,০০০ ও স্বাস্থ্যকর্মী- ১০৫,০০০-১৮০,০০০ টাকা।
অতিরিক্ত সুবিধা
বেশির ভাগ কোম্পানি কর্মীদের জন্য রয়েছে বিনা মূল্যে আবাসন ও খাবার, পরিবহন ও চিকিৎসা সুবিধা, বাৎসরিক ছুটি ও রিটার্ন টিকিট প্রদান করে।
সৌদি আরবে খরচ
জীবনযাত্রার মান উন্নত হলেও খরচ তুলনামূলক কিছুটা বেশি। নিজস্ব আবাসনের ভাড়া মাসে গড়ে ৩২,০০০ ৯০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। খাবারের ব্যয় প্রায় ২০,০০০ টাকা এবং পরিবহন খরচ ৬,০০০-১০,০০০ টাকার মধ্যে। তবে কোম্পানি প্রদত্ত সুবিধাগুলো থাকলে এই খরচ অনেকটাই কমে যায়।
বেতন বৃদ্ধির সম্ভাবনা
ভিশন ২০৩০ এর আওতায় সৌদি আরবের অর্থনীতি দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। নতুন শিল্প, স্মার্ট সিটি, ও মেগা প্রকল্পগুলোর কারণে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা বাড়ছে, ফলে বেতনও ধীরে ধীরে বাড়ছে বিশেষত দক্ষ ও প্রফেশনাল কর্মীদের জন্য। চাহিদাসম্পন্ন পেশা বর্তমানে নি¤œলিখিত খাতে কর্মীর চাহিদা সর্বাধিক- নির্মাণ শ্রমিক ও প্রকৌশলী, আইটি বিশেষজ্ঞ, স্বাস্থ্যকর্মী, পেট্রোলিয়াম ও গ্যাস টেকনিশিয়ান।
ভিসা নবায়ন
কোম্পানি ভিসার মেয়াদ শেষ হলে, নিয়োগদাতা কোম্পানির মাধ্যমে এটি নবায়ন করা যায়। সৌদি সরকারের নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করলেই নবায়ন সহজে সম্ভব।
চাকরির অফার পাওয়া
প্রথমে কোনো সৌদি কোম্পানির কাছ থেকে চাকরি অফার লেটার পেতে হবে। অফার লেটার এর জন্য সৌদি জব পোর্টাল (যেমন: ইধুঃ, ঘধঁশৎর এঁষভ, খরহশবফওহ, ওহফববফ এঁষভ ইত্যাদি) ভিজিট করা যেতে পারে, ইগঊঞ অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সি এর মাধ্যমে ভিসা প্রসেস করতে হবে, সরাসরি কোম্পানির ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে । এর পর কোম্পানির ভিসা অনুমোদন নিতে হবে; যখন কোম্পানি তোমাকে নিয়োগ দেয়, তারা সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয় ও বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভিসা নম্বর (ঠরংধ ইষড়পশ ঘঁসনবৎ) ইস্যু করাবে। এর পর হবে ভিসা প্রসেসিং বাংলাদেশ থেকে; এরপর দেশে অবস্থিত সৌদি দূতাবাস বা ভিসা সেন্টারে নিচের কাগজপত্র দিয়ে ভিসা স্ট্যাম্প করাতে হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
বৈধ পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদসহ), ভিসা অথরাইজেশন নম্বর, চাকরির অফার লেটার/কনট্রাক্ট, মেডিকেল রিপোর্ট (এঅগঈঅ অনুমোদিত সেন্টার থেকে), পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট, শিক্ষাগত যোগ্যতার কাগজ (কিছু পদের জন্য), ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে) ও ইগঊঞ রেজিস্ট্রেশন (বাংলাদেশিদের জন্য বাধ্যতামূলক)।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন