ঢাকা সোমবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৫

মালয়েশিয়া

সুযোগ পাচ্ছেন আটকে পড়া কর্মীরা

প্রবাস প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২৫, ০১:৫৫ এএম

মালয়েশিয়াগামী বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়োগ পরিস্থিতি বর্তমানে দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। একদিকে, গত বছর মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা প্রায় ১৮ হাজার কর্মী শেষ পর্যন্ত প্রবেশের অনুমোদন পেয়েছেন। অন্যদিকে, নতুন কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর আগেই মালয়েশিয়া সরকার রিত্রুুটিং এজেন্সিগুলোর জন্য এমন কিছু কঠোর শর্ত আরোপ করেছে, যা এই বাজারকে আবার সীমিত করে দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে।

১৮ হাজার আটকে পড়া কর্মীর জন্য ‘গ্রিন সিগন্যাল’

দীর্ঘ অনিশ্চয়তা ও অপেক্ষার পর অবশেষে সেইসব কর্মীদের মুখে হাসি ফুটেছে, যারা গত ৩১ মে-এর সময়সীমার মধ্যে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে পারেননি। তাদের  মালয়েশিয়া সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রায় ১৮ হাজার অপেক্ষমাণ বাংলাদেশি কর্মীর দেশটিতে প্রবেশের জন্য অনুমোদন দিয়েছে। এই কর্মীদের সরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হচ্ছে, যা প্রক্রিয়াটিকে স্বচ্ছ রাখতে সাহায্য করবে। এই কর্মীরা প্রাথমিকভাবে মালয়েশিয়ার নির্মাণ এবং পর্যটন সেক্টরে কাজ করার সুযোগ পাবেন। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন নিয়োগকারী কোম্পানিগুলোকে দ্রুত চাহিদাপত্র সত্যায়নের জন্য প্রয়োজনীয় নথি (যেমন: কোম্পানির অনুমোদন, ব্যাংক স্লিপ) ঋডঈগঝ পোর্টালে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে।

নতুন নিয়োগে কঠোরতা

আটকে পড়া কর্মীদের সমস্যা মিটলেও, নতুন করে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার কবে খুলবে, তা নিয়ে এখনো সংশয় রয়েছে। তবে, মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় কর্মী নিয়োগের জন্য রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর ওপর কঠোর মানদ- আরোপ করেছে তা হলো বাজার বন্ধের কারণ; সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় গত বছরের ৩১ মে থেকে বাংলাদেশের জন্য শ্রমবাজার বন্ধ রয়েছে।

বাধ্যতামূলক মানদণ্ড 

নতুন শর্তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো; ন্যূনতম ৫ বছর সন্তোষজনকভাবে কার্যক্রম পরিচালনার অভিজ্ঞতা। গত পাঁচ বছরে অন্তত ৩ হাজার কর্মী সফলভাবে বিদেশে পাঠানোর প্রমাণ। কমপক্ষে তিনটি ভিন্ন দেশে কর্মী পাঠানোর অভিজ্ঞতা। কমপক্ষে ১০ হাজার বর্গফুট আয়তনের স্থায়ী অফিস থাকা।

ফিরে আসতে পারে সিন্ডিকেট

অভিবাসন বিশ্লেষক ও রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের মধ্যে নতুন শর্তগুলো নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

অবাস্তব শর্ত: অধিকাংশ এজেন্সির মতে, এই শর্তগুলো এতই কঠোর যে হাতেগোনা কয়েকটি বড় এজেন্সি ছাড়া অন্যদের পক্ষে তা পূরণ করা অসম্ভব।

বাজার দখলের ভয়: অনেকে আশঙ্কা করছেন, এই নিয়মগুলো আসলে একটি সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে তৈরি করা হয়েছে এবং এটি আবারও শ্রমবাজারকে ‘বড় খেলোয়াড়দের’ নিয়ন্ত্রণে এনে পুরোনো সিন্ডিকেটের উত্থান ঘটাতে পারে।

সতর্ক থাকা জরুরি

প্রতারণা সতর্কতা : মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন সাবাহ প্রদেশে কর্মী পাঠানোর নামে সক্রিয় প্রতারক চক্র সম্পর্কে সতর্ক করেছে, কারণ সাবাহ প্রদেশে কর্মী নিয়োগের কোনো চুক্তি এই মুহূর্তে কার্যকর নেই।

অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযান : মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ নিয়মিতভাবে অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে, যেখানে বৈধ নথি ছাড়া অবস্থানরত বহু বাংলাদেশি শ্রমিকও আটক হচ্ছেন।

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার এখন এক সন্ধিক্ষণে। একদিকে, মানবিক কারণে আটকে পড়া কর্মীদের যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা একটি স্বস্তির খবর। অন্যদিকে, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যে কঠোর শর্ত আরোপ করা হয়েছে, তা বাংলাদেশের শ্রমবাজারের জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, যা সুষ্ঠু ও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার সুযোগকে সীমিত করতে পারে।