ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতি বড় বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে বাংলাদেশে। এতে দেশের অর্থনীতি ও রপ্তানি খাত নতুন ঝুঁকির মুখে পড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রোববার (৯ নভেম্বর) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে ‘বাংলাদেশ-কোরিয়া ভবিষ্যৎ সম্পর্ক’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিক ও নীতিনির্ধারকেরা।
তারা বলেন, পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনই দূরদর্শী নীতি গ্রহণ জরুরি। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও টেকসই গণতান্ত্রিক কাঠামো ছাড়া অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি টেকানো সম্ভব নয়।
এ সময় সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, বাংলাদেশ এখন একাধিক জটিল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। অর্থনৈতিক সংকট, জাতীয়তাবাদের উত্থান এবং দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনাপূর্ণ ভূরাজনীতি; সবকিছুই আমাদের জন্য সতর্ক সংকেত।
তিনি আরও বলেন, এই অঞ্চলে পরাশক্তির প্রভাব ক্রমেই বেড়ে চলেছে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বাংলাদেশের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। এসব মোকাবিলায় টেকসই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা ছাড়া বিকল্প নেই। প্রথমেই আমাদের জাতীয় স্বার্থকে নিরাপদ রাখতে হবে।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের আস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ব্যবসায়ীরা সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধায় পড়ছেন। এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি বৈশ্বিক বাণিজ্যে ভোগান্তি আরও বাড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নীতির প্রভাবে রপ্তানি খাতে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং বাংলাদেশের পোশাক খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক জানান, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের জন্য বাণিজ্যিক সুবিধা কমে যেতে পারে। এজন্যই কোরিয়া ২০২৬ সালের আগেই বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (EPA) করতে আগ্রহী।
তিনি বলেন, এলডিসি পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বছরে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। তাই আগেভাগে নতুন বাণিজ্য কাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পারভেজ করিম আব্বাসি বলেন, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়া সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে যৌথভাবে কাজ করতে পারে। দেশটিতে প্রচুর ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল থাকায় পিপিপি (Public–Private Partnership) ভিত্তিতে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
তিনি আরও যোগ করেন, প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি খাতেও দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন এশিয়া ফাউন্ডেশনের দক্ষিণ কোরিয়া প্রতিনিধি ড. সং কুয়ানজিন, সাবেক রাষ্ট্রদূত মোস্তাফিজুর রহমানসহ কূটনীতিক ও গবেষকরা।

