একসময় ইলিশ ছিল নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত বাঙালির রসনাবিলাসের অন্যতম অনুষঙ্গ। ইলিশের মৌসুমে প্রতিদিন না হলেও, মাঝে মাঝে পাতে এ মাছের উপস্থিতি ছিল। প্রতিবেশীর ঘর থেকে ভেসে আসত ইলিশ ভাজার সুঘ্রাণ, যা বাঙালির উৎসব আর ঐতিহ্যকে জানান দিত। অথচ, সেই ইলিশ এখন মধ্যবিত্তদের সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। নিম্নবিত্তরা তো ইলিশ খাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারেন না। জাতীয় মাছ ইলিশ এখন আর সাধারণের মাছ নেই। এটি এখন শোভা পায় কেবল উচ্চবিত্তদের খাবার মেন্যুতে, এ মাছ যেন পরিণত হয়েছে এক প্রকার বিলাসপণ্যে।
রাজশাহীর ৯টি উপজেলার হাট-বাজারে এখন আর দেখা মিলে না ইলিশের। একসময় বর্ষা মৌসুম এলেই গ্রামাঞ্চলের বাজারগুলোয় হরহামেশাই দেখা মিলত রুপালি মাছখ্যাত ইলিশের। ফলে গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ ভুলতে বসেছেন ইলিশের স্বাদ।
এদিকে রাজশাহী শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা পদ্মায় জাটকা ইলিশ তার দাম আকাশচুম্বী। এ কারণে শহরের সাধারণ মানুষ এখন আর ইলিশ কিনতে পারেন না। অথচ ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ এই প্রবাদ একসময় ইলিশকে ঘিরেই প্রচলন ছিল বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে।
রাজশাহী অঞ্চলে ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় আকাশচুম্বী দাম হাঁকেন বিক্রেতারা। মহানগরীতে ইলিশ পাওয়া গেলেও দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় সবাই কিনতে পারেন না। ফলে, পুকুরে চাষ করা রুই, মিরকা, কাতলা মাছ কিনেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে বেশির ভাগ মানুষকে। অপরদিকে পহেলা বৈশাখের পান্থা ইলিশ নামের উৎসব পালন করতে হচ্ছে দেশীয় মাছ দিয়েই। সারা বিশ্বে চাহিতা থাকায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। বিদেশে রপ্তানির কারণে দাম বেশি হওয়ায় ইলিশের স্বাদ ভুলতে বসেছেন অনেকই।
বাগমারা উপজেলায় ভটখালী গ্রামের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, বর্ষা মৌসুমে একসময় বাগমারা, তানোর, মোহনপুরসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে স্বল্প দামে অহরহ পাওয়া যেত ইলিশ। কিন্তু বিদেশে রপ্তানি করার কারণে দাম বেড়ে যাওয়ায় গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারে এখন আর দেখা মিলে না ইলিশের। ফলে ইলিশের স্বাদ ভুলতে বসেছেন, গ্রামাঞ্চলের মানুষ।
মহানগরীর বাসিন্দা আহম্মেদ শফি উদ্দিন বলেন, একসময় নগরবাসীসহ রাজশাহীবাসীর আনন্দ উৎসবের প্রধান আকর্ষণ ছিল ইলিশ। আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব মিলে ইলিশের পার্টি জমতো। কিন্তু এখন আর সেই ভোজন দেখতে পাওয়া যায় না। কারণ দাম অনেক বেশি। গরিবের নাগালের বাইরে চলে গেছে ইলিশ।
তিনি আরও বলেন, পদ্মা নদীতেও পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়ে না। তাই পেশাবদল করেছে নদীপাড়ের মানুষ। এ অঞ্চলের মানুষকে ইলিশের ঐতিহ্য ফিরে পেতে নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ সচেতন মহলের এগিয়ে আসা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :