ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর, ২০২৫

স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার নেতৃত্বে

মসজিদের পুকুরের মাছ লুট, ক্ষুব্ধ গুচ্ছগ্রামবাসী

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২৫, ০২:০৫ এএম

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার আঁওড়া গুচ্ছগ্রামে মসজিদের উন্নয়ন তহবিলের জন্য চাষ করা মাছ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার ভোরে উপজেলার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জাকারিয়া হোসেনের নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের একটি দল ওই পুকুর থেকে অন্তত ১০ মণ মাছ তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।

এ ঘটনায় গুচ্ছগ্রামজুড়ে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। গুচ্ছগ্রামবাসীর দাবি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন বাধাগ্রস্তকারী এবং মসজিদের সম্পদ লুটকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আঁওড়া গুচ্ছগ্রামের ‘চ্যানরাল’ নামের ওই পুকুরে তিন মাস আগে মসজিদ উন্নয়ন তহবিলের উদ্দেশ্যে মাছ চাষ শুরু করা হয়। প্রায় ৫০ হাজার টাকার রুই, মৃগেল, হাঙ্গরী, কাতলা ও সিলভার কার্প জাতের মাছের পোনা ছাড়েন গ্রামবাসী। নিয়মিত খাবার ও পরিচর্যার মাধ্যমে মাছগুলো বড় হচ্ছিল। কিন্তু গতকাল ভোরে হঠাৎ জাকারিয়া হোসেনের নেতৃত্বে একদল লোক পুকুরে জেলে নামিয়ে মাছ ধরে নিয়ে যায়।

মসজিদের ইমাম ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘ফজরের নামাজ শেষে বাড়ি ফিরেই দেখি খোরশেদ, জাকারিয়া, রিপন, মোজা, ইকবালসহ অনেকে আমাদের পুকুরে মাছ ধরছে। বাধা দিয়েও কিছুই করা যায়নি। জোরপূর্বক তারা অন্তত ৪০-৫০ হাজার টাকার মাছ তুলে নিয়ে যায়।’

স্থানীয় শিরিনা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী সাইদুর রহমানসহ গুচ্ছগ্রামের মুসল্লিরা মসজিদের উন্নয়নের জন্য পুকুরে মাছ চাষ করেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কিছু লোক পুকুর দখল করতে চায়। আজ (গতকাল) তারা জেলে নামিয়ে সব মাছ ধরে নিয়ে গেছে।’

একই অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসী সালমা বেগম, আমিছা বিবি, তাইরুল ইসলাম, ববি বেগমসহ আরও অনেকে।

স্থানীয়রা জানান, চ্যানরাল পুকুরটি মূলত একটি সরকারি (ভিপি) পুকুর। ২০২৪ সালে কালাই উপজেলা যুবলীগের তৎকালীন সভাপতি সানোয়ার হোসেন ছানা এটি ইজারা নেন। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের পর তিনি পুকুরটি আঁওড়া গুচ্ছগ্রাম জামে মসজিদ কমিটিকে দান করেন। এরপর থেকে মসজিদ কমিটি পুকুরটির রক্ষণাবেক্ষণ ও মাছ চাষ করে আসছিল।

মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘পুকুরটির ডিসিআরসহ সব বৈধ কাগজপত্র আমাদের কাছে আছে। এটি মসজিদের সম্পদ। আমিসহ গ্রামের মানুষ মিলে মাছ চাষ করছিলাম। অথচ জাকারিয়ার নেতৃত্বে একদল লোক ১০-১৫ মণ মাছ জোরপূর্বক ধরে নিয়ে গেছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’

অভিযুক্ত জাকারিয়া হোসেনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে কালাই থানার ওসি জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা জেনেছি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। তবে এখনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কালাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইফতেকার রহমান বলেন, ‘পুকুরটি একটি ভিপি পুকুর, যা ১৪৩১ থেকে ১৪৩৩ সাল পর্যন্ত সানোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তির নামে ইজারা দেওয়া আছে। আইন অনুযায়ী তিনি এটি অন্য কাউকে হস্তান্তর করতে পারেন না। তবে পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল হলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’