ঢাকা বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫

ভিন্ন গ্রুপের রক্তে প্রসূতির মৃত্যু, বন্ধ হচ্ছে অবৈধ সেই ক্লিনিক

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৫, ০২:০০ এএম

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ভিন্ন গ্রুপের রক্ত পুশ করার পর এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে হাসপাতালের মালিক ও চিকিৎসক পলাতক রয়েছেন। নিহত প্রসূতির নাম, খাদিজা আক্তার (২৫)। তিনি উপজেলার চাপাইর এলাকার আবির হোসেনের স্ত্রী।

এদিকে এ ঘটনার তদন্ত করে এসে লাইসেন্স নবায়ন না করাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ পায় তদন্ত কমিটি। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে অবৈধ ক্লিনিকটি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত ও ক্লিনিক পরিদর্শন শেষে এসব তথ্য জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

এলাকাবাসী, নিহতের পরিবার ও তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার রাতে উপজেলার কালিয়াকৈর ট্রাক স্টেশন এলাকায় ‘রুমাইছা জেনারেল হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ নামের অবৈধ ক্লিনিকে সিজারের মাধ্যমে প্রসূতি খাদিজা আক্তারের ছেলে সন্তান হয়। ওই ক্লিনিকের চিকিৎসক ডা. জাকিয়া সুলতানা ও তার টিম খাদিজার সিজার করেন। কিন্তু সিজারের সময় তারা অন্য এক রোগীর জন্য রাখা ভিন্ন গ্রুপের রক্ত তার শরীরে পুশ করেন। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ কৌশলে তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। গত সোমবার ভোররাত পৌনে ৪টার দিকে প্রসূতি মা খাদিজার মৃত্যু হয়। পরে প্রভাবশালীদের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।

তবে প্রসূতি মৃত্যুর বিষয়টি মুহূর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে ওই দিন বিকেলে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরদিন গতকাল সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাদিয়া তাসলিম মুনমুনের নেতৃত্বে তদন্ত টিম ওই ক্লিনিক পরিদর্শন করেন। এরপর দুপুরে গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মামুনুর রহমানের নেতৃত্বে অপর একটি টিম প্রসূতি খাদিজার মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে যান।

তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা যায়, অন্য রোগীর জন্য রাখা ভিন্ন গ্রুপের রক্ত পুশ করার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া লাইসেন্স নবায়ন না করে অবৈধভাবে নানা অনিয়মের মাধ্যমে ক্লিনিকটি পরিচালিত করা হচ্ছিল। ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুসহ নানা অভিযোগে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে ক্লিনিকটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

 প্রসূতির মৃত্যুর বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার বিষয়ে ক্লিনিকের আবাসিক মেডিকেল অফিসার  মনিরুজ্জামান বলেন, ‘প্রসূতির মৃত্যুর বিষয়টি নিহতের পরিবারের সঙ্গে সমাধান হয়ে গেছে। কীভাবে এটা সমাধান করা হয়েছে, আমি জানি না। সেটা ক্লিনিকের মালিকপক্ষ বলতে পারবেন।’

এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. মামুনুর রহমান জানান, তদন্তে জানা গেছে অন্য রোগীর জন্য রাখা ভিন্ন গ্রুপের রক্ত পুশ করায় ওই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ২০২২/২৩ সালের পরে লাইসেন্স নবায়ন না করে ক্লিনিকটি অবৈধভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে। বর্তমানে চারজন রোগী থাকায় বুধবার (আজ) পর্যন্ত ক্লিনিকটি চালু থাকবে। এরপর বৃহস্পতিবার (আগামীকাল) থেকে ক্লিনিকটি বন্ধ করে দেওয়া হবে।