- পাইকগাছার শ্রমিকরা কাজের অভাবে ইটভাটায় ছুটছেন
- নারী ও শিশুসহ কাজ করছেন শ্রমিকরা
- সংসারের খরচ চালাতে বাধ্য হয়ে দূর-দূরান্তে যান শ্রমিকরা
‘কি করবো, কুনে কাম-কাজ নেই! সংসার চলোতি ভাটায় কামে যাতি হবে। ছাবাল-মাইয়েদের লেহাপড়া আর ঘরের খোরাক যোগাতি এদের থিয়ে ফেনি যাবো, মা তুঁই দেহে রাইখো সব।’ বাসে উঠার আগে মাকে কথাগুলো বলছিলেন পাইকগাছার রমজান আলী।
তার মতোই প্রতি বছর খুলনার পাইকগাছা উপজেলা থেকে হাজারো শ্রমিক কাজের অভাবে দেশের বিভিন্ন ইটভাটায় পাড়ি জমাচ্ছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও স্থানীয়ভাবে কাজের সুযোগ না থাকায় তারা বাধ্য হচ্ছেন দূরের ভাটায় গিয়ে অমানবিক পরিবেশে কাজ করতে। কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে, কেউ একা, সবাই ছুটছেন জীবিকার সন্ধানে।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চলে ইট বানানোর মৌসুম। এ সময় চুক্তিভিত্তিকভাবে সর্দারের মাধ্যমে শ্রমিক নেওয়া হয়। মৌসুম শুরুর আগে সর্দার শ্রমিকদের অগ্রিম কিছু টাকা দেন, যা স্থানীয়ভাবে ‘দাদন’ নামে পরিচিত।
দাদনের অঙ্ক কাজের ধরন অনুযায়ী ভিন্ন হয়, কারিগরদের দেওয়া হয় সর্বোচ্চ অগ্রিম। ছয় মাসে তারা এক লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করেন। জোগালি পান ৪৫ হাজার, আগাটক ৮০-৯০ হাজার, গোড়ারটক ৭০-৮০ হাজার, আর মাটি বহনকারীরা ৫০-৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত পান। খোরাকি হিসেবে প্রতিজন শ্রমিক সপ্তাহে ৩০০-৫০০ টাকা পান।
ইটভাটাগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, কেউ মাটি কাটছেন, কেউ মাটি আনা-নেওয়া করছেন, কেউ ইট ছাঁচে ভরছেন, কেউ আবার কয়লার ভাটায় ইট পোড়াচ্ছেন। পুরুষদের পাশাপাশি নারী ও শিশুদেরও দেখা যায় কঠোর পরিশ্রম করতে।
ভাটার শ্রমিক আরসাদ গাজী বলেন, ‘অভাবের কারণে আমাদের এলাকায় টিকতে পারি না। ৬ মাস ভাটায় থাকি, তখন সব সংসার-সন্তান নিয়ে যাই। আবার মৌসুম শেষে সব নিয়ে ফিরে আসি।’
স্থানীয়রা জানান, এলাকায় কাজের সুযোগ সীমিত এবং পণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। নি¤œ আয়ের মানুষ তো বটেই, এমনকি মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে অমানবিক পরিশ্রমের মাঝেও ইটভাটাই হয়ে উঠেছে অনেকের একমাত্র ভরসা।
ভাটার পাশেই শ্রমিকদের জন্য টিনের ঘর তুলে দেওয়া হয়। সেখানেই তারা তিনবেলা নিজেরাই রান্না করে খান। ফজরের আজানের পর থেকেই শুরু হয় তাদের কাজ, বিরতি সামান্য, তারপর রাত অবধি শ্রমের চাকা ঘুরতে থাকে।