ঢাকা শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৫

সড়কের নির্মাণকাজ ধীরগতি, এলাকাবাসীর চরম দুর্ভোগ

কুমিল্লা উত্তর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২৫, ০১:০৮ এএম

কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মানিকারচর ভায়া ভাটেরচর সড়কটির নির্মাণকাজ ধীরগতিতে চলায় এলাকাবাসী চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে হাজারো মানুষ যাতায়াত করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কাজের অগ্রগতি না থাকায় সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে তা এখন যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মানিকারচর ভায়া দড়িলুটেরচর পর্যন্ত সাড়ে ৭ কিলোমিটার সড়কের টেন্ডার হয়। ‘চৌধুরী অ্যান্ড মাস্টার’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকার চুক্তিতে কাজটি পায়। ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো কাজ শেষ না হওয়ায় জনদুর্ভোগ দিন দিন বাড়ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ, সুরকি ও ইটবালি উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এতে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়েছে।

মেঘনা উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হান্নান বলেন, ‘এই সড়কের সাড়ে ৭ কিলোমিটার এলজিইডির অধীনে এবং আরও দেড় কিলোমিটার সড়ক ও জনপদের অধীনে। উপজেলা সদর থেকে দড়িলুটেরচর পর্যন্ত অংশে কাজ চললেও দড়িলুটেরচর থেকে ভাটেরচর পর্যন্ত সড়কের কোনো উন্নয়নকাজ শুরু হয়নি। ফলে মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’

লুটেরচর গ্রামের শাহ আলম বলেন, ‘বৃষ্টি হলে সড়কের গর্তে পানি জমে দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। প্রতিদিনই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। যানজট লেগেই থাকে।’

মানিকারচর গ্রামের আব্দুল বাতেন বলেন, ‘সন্ধ্যার পর কোনো চালক এই সড়কে গাড়ি চালাতে চায় না। ঝুঁকি অনেক।’ ভাওরখোলা গ্রামের সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘মেঘনা উপজেলা থেকে ঢাকায় যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে চরম কষ্টে চলাচল করতে হচ্ছে।’ একজন স্কুলছাত্র বলেন, ‘রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটা যায় না। গর্তে জমে থাকা কাদা পানির ওপর দিয়ে অটোরিকশা গেলে পানি ছিটকে জামাকাপড় নষ্ট হয়।’

স্থানীয় সিএনজিচালক আরিফ বলেন, ‘প্রতিদিনই রাস্তায় ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। অসুস্থ রোগী নিয়ে হাসপাতালে যেতে ভয় লাগে।’

অটোচালক জাহাঙ্গীর মিয়া জানান, ‘ভাঙাচোরা রাস্তায় গাড়ির নাট-বল্টু খুলে যায়। সারা দিনের আয়ের একটা অংশ মেরামতেই চলে যায়। ২০ মিনিটের রাস্তা যেতে সময় লাগে ৪০-৪৫ মিনিট।’

এ বিষয়ে মেঘনা উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি উপজেলায় যোগ দিয়েছি মাত্র এক মাস হয়েছে। সড়কটি পরিদর্শন করেছি এবং দ্রুত কাজ শেষ করতে তদারকি করছি। ইতোমধ্যে সাড়ে ৭ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ৫৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কাজের মেয়াদ রয়েছে ২০২৬ সালের ১১ মার্চ পর্যন্ত।’

সড়ক ও জনপদের অধীনে দড়িলুটেরচর থেকে ভাটেরচর পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কের বিষয়ে কুমিল্লা সড়ক ও জনপদ বিভাগের দাউদকান্দির গৌরীপুর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘সড়কটি আমাদের অধীনে আছে কিনা, তা খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হতে হবে। যদি আমাদের অধীনে হয়, তাহলে দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’