ফিলিস্তিনি রাজনীতির জনপ্রিয় মুখ মারওয়ান বারঘৌতির মুক্তির জন্য ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগের কথা বিবেচনা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কারাবন্দি এই ফিলিস্তিনি নেতার মুক্তির আবেদন বহুবার নাকচ করেছে ইসরায়েল।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) প্রকাশিত টাইম ম্যাগাজিনের এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনার ফোন করার প্রায় ১৫ মিনিট আগেই আমাকে ঠিক এই প্রশ্ন করা হয়েছে। তাই আমি শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেব।’
সাক্ষাৎকারে তিনি মন্তব্য করেন, ফিলিস্তিনিদের এখন কোনো দৃশ্যমান নেতৃত্ব নেই। বারঘৌতি কি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে ফিলিস্তিনিদের ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হতে পারেন—এমন প্রশ্নের জবাবেই তিনি এই মন্তব্য করেন।
দ্বিতীয় ইন্তিফাদা চলাকালে হামলা ও আত্মঘাতী অভিযানের পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২০০৪ সালে ইসরায়েলি আদালত বারঘৌতিকে পাঁচবার যাবজ্জীবন এবং অতিরিক্ত ৪০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। তবে ৬৬ বছর বয়সী বারঘৌতি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
২০০০ সালের ইন্তিফাদায় নেতৃত্বদানকারী বারঘৌতি পশ্চিম তীর ও গাজায় ফাতাহ আন্দোলনের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি হামাসসহ প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক বজায় রেখেছেন এবং তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয়। ফাতাহর অনেকেই তাকে প্রয়াত নেতা ইয়াসির আরাফাতের উত্তরসূরি হিসেবে দেখেন।
দুই বছরের সংঘাতের অবসানে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সম্প্রতি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। এতে গাজায় আটক ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মি ফেরত আসে এবং ইসরায়েল প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়। এ ছাড়া নিহত ২৮ জন জিম্মির মধ্যে ১৫ জনের দেহাবশেষও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ পেয়েছে।
যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখতে গত ১০ দিনে একাধিক মার্কিন কর্মকর্তা ইসরায়েল সফর করেছেন। ট্রাম্পের পর সফর করেছেন তার দূত স্টিভ উইটকফ, সাবেক উপদেষ্টা ও ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।
এদিকে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া দুই ফিলিস্তিনি বন্দি অভিযোগ করেছেন, ১৪ সেপ্টেম্বর কারাগার স্থানান্তরের সময় ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বারঘৌতিকে মারধর করে অচেতন করে ফেলেন। তবে ইসরায়েলি কারা কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ ‘ভুয়া’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
এর আগে আগস্টে অতি-ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির এক ভিডিও প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি কারাগারে বারঘৌতির সঙ্গে দেখা করে বলেন, ‘তুমি জিততে পারবে না।’
ফিলিস্তিনে পরবর্তী নেতৃত্ব কে নেবে—এ প্রশ্ন এখন কেন্দ্রে। ৮৯ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস পশ্চিম তীরের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করলেও গাজা এখনো হামাসের দখলে। ২০০৫ সালে নির্বাচিত আব্বাসের মেয়াদ শেষ হলেও নতুন নির্বাচন বারবার স্থগিত হয়েছে।
ট্রাম্প ও তার পশ্চিমা-আরব মিত্ররা হামাসের নিরস্ত্রীকরণ ও ক্ষমতা হস্তান্তর চান। তবে ইসরায়েলের কট্টর-ডানপন্থী মন্ত্রীরা বিশেষত বেন-গভির ও অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ পশ্চিম তীর অধিগ্রহণের জন্য চাপ দিচ্ছেন, যেজন্য কড়া বিরোধিতা করছেন ট্রাম্প।
টাইম-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘এটা হবে না। আমি আরব দেশগুলোকে কথা দিয়েছি। যদি ইসরায়েল পশ্চিম তীর দখল করে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সব সমর্থন হারাবে।’
বুধবার ইসরায়েলি সংসদে পশ্চিম তীর অধিগ্রহণের পক্ষে একটি বিল ২৫-২৪ ভোটে অনুমোদিত হয়। যদিও প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর লিকুদ দল এতে সমর্থন দেয়নি। নেতানিয়াহুর দপ্তর একে ‘রাজনৈতিক উসকানি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স বলেছেন, ‘যদি এটি শুধুই রাজনৈতিক প্রদর্শনী হয়ে থাকে, তবে তা অত্যন্ত অবিবেচক সিদ্ধান্ত। আমি ব্যক্তিগতভাবে এটিকে অপমানজনক বলে মনে করি।’




