গাজা উপত্যকায় সাময়িক যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর নির্যাতন, বেআইনি হত্যাকাণ্ড ও সন্দেহজনক মৃত্যুর ভয়াবহ প্রতিবেদন প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বন্দিশালা সেডিতিমান থেকে যে ১৯৫ ফিলিস্তিনি বন্দির লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে, তাতে স্পষ্টভাবে নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার চিহ্ন পাওয়া গেছে। ফিলিস্তিনি চিকিৎসকেরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দ্য গার্ডিয়ান এক নজিরবিহীন প্রতিবেদনে চিকিৎসা বিষয়ক সনদ, গোপন ছবি ও সাক্ষ্য তুলে ধরে এমন সব অপরাধের পর্দা ফাঁস করেছে, যা ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ তদন্তে নতুন অধ্যায় খুলে দিতে পারে। গার্ডিয়ানের এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর জাতিসংঘের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।
গার্ডিয়ান এবং ফিলিস্তিনি গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সম্প্রতি গাজা উপত্যকায় ১৯৫ ফিলিস্তিনি বন্দির লাশ ফেরত দিয়েছে, যেগুলোর প্রতিটিতে নির্যাতন ও হত্যার স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক মুনির আল-বার্শ জানিয়েছেন, লাশের ব্যাগে পাওয়া নথিপত্র দেখে মনে হচ্ছে- নেগেভ মরুভূমির সেদিতিমান সামরিক বন্দিশিবির থেকে এগুলো আনা হয়েছে।
খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, অনেক লাশ পাওয়া গেছে যেগুলোর হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় ছিল, যা প্রমাণ করে তারা বন্দি থাকা অবস্থায় শহীদ হয়েছেন। কিছু লাশে তো কাছ থেকে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে, আর কিছু লাশ ইসরায়েলি ট্যাংকের চাকার নিচে পিষ্ট হয়েছে।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ মরিস টিডবল-বিন্স এই ভয়াবহ প্রমাণের ভিত্তিতে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে ভুক্তভোগীদের শনাক্ত করে তাদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ধারণ করা যায়।
এদিকে, ২০ মাস ধরে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ছিলেন এমন একজন সাংবাদিক বন্দিদের ওপর নৃশংস নির্যাতনের ভয়াবহ বিবরণ তুলে ধরেছেন। তিনি জানান, বন্দিদের কঠোর শীতের মধ্যে নগ্ন অবস্থায় রাখা হয়, হাত ও চোখ বেঁধে ১০০ দিন ধরে আটক রাখার পাশাপাশি কুকুর দিয়ে নির্যাতন করা হয়।
ইসরায়েলের দখলকৃত ভূমিতে তৎপর সংগঠন ‘ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস’ জানিয়েছে, ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মৃত্যুর হার নজিরবিহীনভাবে বেড়েছে এবং নতুন তথ্য-প্রমাণ আসার পর এ বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক স্বাধীন তদন্তের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, গত দুই বছরে তারা ইসরায়েলি আটক কেন্দ্রে পরিকল্পিত নির্যাতনের একাধিক ঘটনা নথিভুক্ত করেছে।