বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ বিন্যান্সের প্রতিষ্ঠাতা চ্যাংপেং ঝাওকে (সিজেড) ক্ষমা করে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, জো বাইডেন প্রশাসনের অধীনে ক্রিপ্টো শিল্পের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া ‘যুদ্ধের’ অবসান টানতেই ট্রাম্প এই ক্ষমা প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে ঝাওকে ক্ষমা করেছেন, যাকে ক্রিপ্টোকারেন্সির বিরুদ্ধে বাইডেন প্রশাসনের যুদ্ধের শিকার করা হয়েছিল। ক্রিপ্টোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শেষ।’
২০২৩ সালের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দোষ স্বীকার করেন ঝাও। তখন তিনি বিন্যান্সের প্রধান নির্বাহী পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করা নিষ্পত্তির অংশ হিসেবে ৪.৩ বিলিয়ন ডলার জরিমানা প্রদান করে। আদালত তাকে চার মাসের কারাদণ্ড দেন।
বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের অন্যতম ঝাও বিন্যান্সকে গড়ে তুলেছিলেন বিশ্বের শীর্ষ ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ হিসেবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে দোষ স্বীকারের পর প্রতিষ্ঠানটির দেশটিতে কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বহু মাসের জল্পনা ও তদবিরের পর ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত ঝাও ও বিন্যান্সের জন্য বড় জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের পুনরায় ক্রিপ্টো শিল্পের প্রতি নরম অবস্থান নেওয়ার ইঙ্গিতও এটি। সমালোচকদের মতে, ট্রাম্প পরিবারের নিজস্ব ক্রিপ্টো ব্যবসা ‘ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইন্যান্সিয়াল’-এর দ্রুত সম্প্রসারণের মধ্যেই এই ক্ষমার সিদ্ধান্ত এসেছে।
বিন্যান্সের এক মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সিজেডের প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই দয়া ও নেতৃত্বের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের ক্রিপ্টো রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি তিনি আবারও প্রমাণ করেছেন।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনি কি ক্রিপ্টো ব্যক্তির কথা বলছেন? অনেকে বলছে, তিনি আসলে কোনো অপরাধ করেননি। বাইডেন প্রশাসন তাকে অন্যায়ভাবে নির্যাতন করেছে। অনেক ভালো মানুষ তার পক্ষ থেকে অনুরোধ করেছিল, তাই আমি তাকে ক্ষমা করেছি।’
এই বছরের শুরুতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, ট্রাম্প পরিবারের ক্রিপ্টো ব্যবসার প্রতিনিধিরা যুক্তরাষ্ট্রে বিন্যান্সের স্থানীয় শাখার সঙ্গে অংশীদারত্বের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তবে ঝাও দাবি করেছেন, ক্ষমার বিনিময়ে কোনো ব্যবসায়িক চুক্তি বা আলোচনাই হয়নি।
তিনি এক্স-এ লিখেছিলেন, ‘আমার সঙ্গে বিন্যান্স যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো পক্ষের কোনো চুক্তি হয়নি। কেউই অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চায় না।’
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক মহলে আলোচিত হচ্ছে যে, বিন্যান্সই ট্রাম্প পরিবারের ক্রিপ্টো উদ্যোগকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বছরের শুরুতে আমিরাতের এক বিনিয়োগ তহবিল থেকে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার গ্রহণের সময় বিন্যান্স তা ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইন্যান্সিয়ালের তৈরি ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করে, যা ট্রাম্প পরিবারের ডিজিটাল মুদ্রাকে বৈধতা দেয় এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপকভাবে লাভজনক প্রমাণিত হয়।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান


