রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চলছে পোষা বক দিয়ে পাখি শিকারের ভয়ংকর খেলা। কলাপাতা, বেতেরপাতা ও বাঁশের চিকন শলা দিয়ে তৈরি করা হয় ৫-৬ ফুট উঁচু ডুলি আকৃতির ফাঁদ। এটি খাল-বিলের পানির ধারে বসানো হয়। ফাঁদের ভেতর একজন শিকারি চুপচাপ লুকিয়ে থাকে।
ফাঁদের মধ্যে একটি বকের পায়ে সুতা বেঁধে রাখা হয়। শিকারি সুতা টান দিলে বকটি চেঁচামেচি করে উড়তে চায়। আশপাশের অন্যান্য পাখি তখন বিপদে পড়া বককে সাহায্য করতে উড়ে আসে। সুযোগ বুঝে শিকারি ফাঁদের ওপরে বসা পাখিগুলোকে ধরে ফেলে। এভাবেই প্রতিদিন অসংখ্য দেশি ও অতিথি পাখি বন্দি হচ্ছে শিকারিদের ফাঁদে। আইন, প্রশাসন ও বনবিভাগ থাকলেও এ অবৈধ পাখি শিকার রোধে তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না।
উপজেলা বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, কর্মকর্তারা গাছ বিক্রি ও টেন্ডার সংক্রান্ত কাজে ব্যস্ত থাকায় পাখি শিকারের বিষয়ে তদারকি হয় না। এখন পর্যন্ত কোনো শিকারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, ফলে শিকারিদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
পীরগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে অসংখ্য খাল-বিল রয়েছে, যেখানে শীত মৌসুমে দেশি পাখির পাশাপাশি অতিথি পাখিরাও আশ্রয় নেয়। জলহাঁস, বক, জলপিপি, ডাহুক, মাছরাঙা— এসব পাখির কলতানে মুখর থাকে এলাকা। কিন্তু কিছু অসাধু শিকারি ফাঁদ পেতে প্রতিদিন ৮-১০ জোড়া বকসহ বিভিন্ন পাখি ধরে বিক্রি করছে। এক জোড়া বক বিক্রি হয় ৩০০-৪০০ টাকায়।
পরিবেশ সচেতনরা বলছেন, অতিথি পাখি প্রকৃতি ও পরিবেশের বন্ধু। তারা শুধু জলাশয়ের সৌন্দর্য বাড়ায় না, পোকামাকড় খেয়ে কৃষিক্ষেতকেও রক্ষা করে। অথচ তাদের রক্ষায় নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী, অনুমতি ছাড়া পাখি হত্যা করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদ- বা এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। পাখির মাংস বা দেহাংশ ক্রয়-বিক্রয় বা পরিবহন করলেও ছয় মাসের কারাদ- বা ৩০ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে। কিন্তু পীরগঞ্জে এসব আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে। পীরগঞ্জের সমাজচিন্তক হাবিবুর রহমান পল্টন বলেন, ‘গ্রামীণ পরিবেশকে পাখির নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত করতে হলে গাছ লাগানো, জলাশয় সংরক্ষণ, কীটনাশক ব্যবহার কমানো এবং মানুষকে প্রকৃতিপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। পাখি শিকার বন্ধে আইন প্রয়োগ ও সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি।’ এ বিষয়ে উপজেলা বন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি পীরগঞ্জে অল্পদিন হলো এসেছি। পাখি শিকারের বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ তথ্য দিলে ব্যবস্থা নেব।’
এলাকাবাসীর দাবি, প্রশাসনের উচিত পাখি শিকার বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং অতিথি পাখিদের রক্ষায় প্রচলিত আইন কার্যকর করা। অতিথি পাখিরা নামেই শুধু অতিথি নয়Ñ তাদের নির্বিচারে হত্যা বন্ধ করে সত্যিকার অর্থে অতিথির মর্যাদা দেওয়া এখন সময়ের দাবি।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন