টানা কয়েক দিনের বৃষ্টি এবং চলমান দুই উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ধীরগতি ও দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সৃষ্ট খানাখন্দের কারণে অন্তত ২০ কিলোমিটার অংশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে সকাল থেকে উপজেলার আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে সরাইল বিশ্বরোড (কুট্টাপাড়া মোড়) হয়ে শাহবাজপুর এলাকা পর্যন্ত দীর্ঘ এই যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন দূরদূরান্তের যাত্রীরা।
যাত্রী ও চালকেরা জানান, টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সড়কের বিভিন্ন অংশে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। এতে বিভিন্ন যানবাহন আটকে যাচ্ছে। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তীব্র যানজটের সৃষ্ট হচ্ছে। গন্তব্যে পৌঁছাতে তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগছে। এ ছাড়া গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত প্রায় ৫১ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পের ১৫ কিলোমিটার পড়েছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অংশে। তবে প্রকল্পকাজের কারণে দীর্ঘদিন ধরে মহাসড়কটিতে নিয়মিত সংস্কারকাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে বিভিন্ন অংশে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া একই মহাসড়কে চলমান ছয় লেন প্রকল্পের কাজের জন্য মহাসড়কে যানবাহনের ধীরগতির কারণে ভোগান্তি আরও বাড়ছে।
এদিকে আশুগঞ্জ গোলচত্বর ও বিশ্বরোড মোড়ে মহাসড়কের অসংখ্য গর্ত গভীর হওয়ায় ধীরগতিতে চলছে পণ্যবাহী যানবাহন। কখনো কখনো সেগুলো গর্তে আটকে গিয়ে বিকল হয়ে পড়ছে। এসব জায়গায় যান চলাচলের গতি নামিয়ে আনতে হচ্ছে ঘণ্টায় এক থেকে পাঁচ কিলোমিটারে। ফলে যানজট বাড়ছে।
অন্যদিকে আশুগঞ্জ থেকে ঢাকামুখী লেনে ভৈরব সেতু পর্যন্তও যানজট ছড়িয়ে পড়ে। সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় অসংখ্য বাস, ট্রাক ও প্রাইভেট কার। অনেক যাত্রী রাত থেকে সকাল পর্যন্ত যানবাহনের মধ্যেই আটকে ছিল।
বাসযাত্রী অ্যাডভোকেট জুবায়ের রহমান বলেন, ‘আমরা কয়েকজন হবিগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলাম। তবে যানজটের কারণে সঠিক সময়ে মিটিংয়ে যোগ দিতে পারি নাই।’
আরেক যাত্রী মুসলিমা আক্তার বলেন, ‘আমি বিজয়নগরের চান্দুরা থেকে লোকাল বাসে উঠেছি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ডাক্তার দেখাব। কিন্তু শাহবাজপুরে এসে দুই ঘণ্টা আটকে আছি, গাড়ি চলে না। হেঁটে কিছুক্ষণ সামনে এসে অটোরিকশা দিয়ে এসে আবার হেঁটে হেঁটে বিশ্বরোডে এসেছি।’
হবিগঞ্জ থেকে বগুড়াগামী পণ্যবাহী ট্রাকচালক মনির হোসেন বলেন, ‘মাধবপুর থেকে এখানে (আশুগঞ্জের বগইর) আসতে আট ঘণ্টা সময় লাগছে। তেল শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাকি পথ কীভাবে যামু, তা জানি না।’ মৌলভীবাজার থেকে ঢাকাগামী বাসের চালক মনির মিয়া বলেন, ‘আমরা অসহায় হইয়া পড়ছি।’
সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রহমান বলেন, উল্টো পথে যানবাহন চলাচলের কারণে যানজট নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হচ্ছে। এ ছাড়া মহাসড়কে যানবাহনের বাড়তি চাপও যানজটের উল্লেখযোগ্য কারণ। তবে যানজট নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, আশুগঞ্জ ও বিশ্বরোড মোড়ের চারপাশে তিন ফুটের বেশি গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে গাড়ি এসে ৭০ কিলোমিটার গতি থেকে কমে ৫ কিলোমিটারে নামতে বাধ্য হচ্ছে। একটি ট্রাককে একটি মোড় অতিক্রমে লাগছে ২০ মিনিট পর্যন্ত। ফলে যানজট ব্যাপক আকারে দাঁড়িয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ জানান, নানা জটিলতায় প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। তবে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে খানাখন্দগুলো জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করা হচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, সড়কটি পড়েছে ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) প্রকল্পের আওতায়। আমরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে আপাতত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। দ্রুতই সংস্কার করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :