ভারতের আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনার পেছনের কারণ অবশেষে প্রকাশ করেছে তদন্তকারী সংস্থা (এএআইবি)। ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় ২৭০ জন প্রাণ হারান। গত ১২ জুন প্লেনটি একটি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রাবাসে বিধ্বস্ত হয়।
প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের তিন সেকেন্ড পরই এটির জ্বালানি সরবরাহ সুইচগুলো প্রায় একযোগে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এতে ইঞ্জিনগুলোতে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
তদন্তকারীরা বিমানের ব্ল্যাকবক্স বিশ্লেষণ করে জানতে পারেন, বিমানের জ্বালানি সরবরাহের দুটি সুইচ তিন সেকেন্ডেরও কম সময়ের ব্যবধানে চালু অবস্থা থেকে বন্ধ হয়ে যায়। তখন বিমানটির গতি ছিল ঘণ্টায় ১৮০ নটিক্যাল মাইলের বেশি।
ব্ল্যাকবক্সে পাওয়া অডিও রেকর্ডিংয়ের বরাতে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, এক পাইলট অপর পাইলটকে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি কেন জ্বালানি সরবরাহের সুইচ বন্ধ করেছেন। উত্তরে অপর পাইলট জানান, তিনি কোনো সুইচ বন্ধ করেননি। পরে দ্রুত সুইচগুলো আবার চালু করা হয় এবং ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ শুরু হলেও তখন আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিমানটি মাটিতে আছড়ে পড়ে।
ঘটনার পরদিনই ভারতের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরো (এএআইবি) ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করে। শনিবার (১২ জুলাই) সংস্থাটি একটি প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনের বিবরণ অনুযায়ী, দুর্ঘটনার দিন উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের আগ মুহূর্ত থেকে শুরু করে বিধ্বস্ত হওয়া পর্যন্ত ঘটনাক্রম নিচে তুলে ধরা হলো:
গ্রিনিচ মান সময় (জিএমটি) অনুযায়ী ৫টা ৪৭ মিনিট (ভারতের স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ১৭ মিনিট): এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং-৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি নয়াদিল্লি থেকে আহমেদাবাদে অবতরণ করে।
৭টা ৪৮ মিনিট (জিএমটি): উড়োজাহাজটিকে বিমানবন্দরের বে-৩৪ থেকে রওনা হতে দেখা যায়।
৭টা ৫৫ মিনিট (জিএমটি): উড়োজাহাজটি বিমান নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে ট্যাক্সি ক্লিয়ারেন্সের অনুরোধ জানায়। এর এক মিনিট পর ২৩ নম্বর রানওয়ের দিকে এগিয়ে যায় এবং উড্ডয়নের জন্য প্রস্তুত হয়।
৮টা ২ মিনিট (জিএমটি): উড়োজাহাজের নিয়ন্ত্রণ ‘গ্রাউন্ড কন্ট্রোল’ থেকে ‘টাওয়ার কন্ট্রোলে’ হস্তান্তর করা হয়।
৮টা ৭ মিনিট ৩৩ সেকেন্ড (জিএমটি): উড্ডয়নের অনুমতি দেওয়া হয়।
৮টা ৭ মিনিট ৩৭ সেকেন্ড (জিএমটি): উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের জন্য রানওয়েতে চলতে শুরু করে।
৮টা ৮ মিনিট ৩৯ সেকেন্ড (জিএমটি): উড়োজাহাজটি রানওয়ে থেকে উড্ডয়ন করে।
৮টা ৮ মিনিট ৪২ সেকেন্ড (জিএমটি): উড়োজাহাজের গতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৮০ নটিক্যাল মাইলে পৌঁছায়। এর পরপরই এটির ইঞ্জিন দুটির জ্বালানি সরবরাহ সুইচগুলো এক সেকেন্ডের ব্যবধানে একে একে বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং ইঞ্জিন দুটির গতি কমতে শুরু করে।
ককপিট ভয়েস রেকর্ডারে একজন পাইলটকে অপর পাইলটকে জিজ্ঞেস করতে শোনা যায়, তিনি কেন জ্বালানি বন্ধ করেছেন। জবাবে অপর পাইলট বলেন, তিনি জ্বালানি বন্ধ করেননি।
বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, উড়োজাহাজটি রানওয়ে থেকে উড্ডয়নের ঠিক পরপরই র্যাম এয়ার টারবাইন (আরএটি) সক্রিয় করা হয়। আরএটি হলো একটি জরুরি ব্যবস্থা, যা বিমানের ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেলে ব্যবহার করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমানবন্দরের সীমানাপ্রাচীর অতিক্রম করার আগেই উড়োজাহাজটির উচ্চতা কমতে শুরু করে।
৮টা ৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড (জিএমটি): উড়োজাহাজের দুটি ইঞ্জিনই সম্পূর্ণভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। র্যাম এয়ার টারবাইনের হাইড্রোলিক পাম্প হাইড্রোলিক শক্তি সরবরাহ করতে শুরু করে।
৮টা ৮ মিনিট ৫২ সেকেন্ড (জিএমটি): উড়োজাহাজের প্রথম ইঞ্জিন বন্ধ অবস্থা থেকে চালু অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়।
৮টা ৮ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড (জিএমটি): উড়োজাহাজের দ্বিতীয় ইঞ্জিনও বন্ধ অবস্থা থেকে চালু অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়।
প্রথম ইঞ্জিনটি সফলভাবে চালু হলেও দ্বিতীয় ইঞ্জিনটি চালু হয়নি।
৮টা ৯ মিনিট ৫ সেকেন্ড (জিএমটি): একজন পাইলট জরুরি সংকেত ‘মে ডে’ পাঠান।
৮টা ৯ মিনিট ১১ সেকেন্ড (জিএমটি): ডেটা রেকর্ডিং বন্ধ হয়ে যায়।
৮টা ১৪ মিনিট ৪৪ সেকেন্ড (জিএমটি): উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়।
আপনার মতামত লিখুন :