ঢাকা মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫

বেনাপোল স্থলবন্দরে ফের জলাবদ্ধতা দুই বছর লাগবে স্থায়ী সমাধানে

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২৫, ১১:৩৭ পিএম

বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত রোববার রাতে ও সোমবার সারা দিনের ভারি বৃষ্টিপাতে আবারও বেনাপোল স্থলবন্দরের শেডের (গুদাম) কানায় কানায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি  হয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন না হলে এবং বৃষ্টির মাত্রা বাড়লে আবারও শেডের মধ্যে পানি ঢুকে ক্ষতি হতে পারে কোটি কোটি টাকার আমদানীকৃত পণ্যের।
বন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, বেনাপোল স্থলবন্দরের ৯, ১২, ১৩, ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮নং শেডের কানায় কানায় বৃষ্টির পানি থৈথৈ করছে। খোলা আকাশের নিচে যেসব মালামাল রাখা আছে, সেগুলো বৃষ্টির পানিতে ভাসছে। গত ৫ দিন আগের বৃষ্টির পানি রেলওয়ের মাটি কেটে বের করে দেওয়া হলেও সেখান থেকে এখনো পানি বের হচ্ছে। বৃষ্টির পানি নিচু জায়গায় জমা হওয়ায় বন্দরের মধ্যে জমে থাকা পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে পারছে না। বন্দরের পানি নিষ্কাশনের জন্য গত ৯ জুলাই ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হলেও তাতেও কোনো সমাধান আসেনি। তাদের বক্তব্য, জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ীভাবে পানি নিষ্কাশন সম্ভব নয়।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরে। জলাবদ্ধতায় বেনাপোল স্থলবন্দরে অনেক স্থানে পানি জমায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই বন্দরে হাঁটুপানি জমে। কয়েক বছর ধরে এ দুর্ভোগ হলেও নজর নেই বন্দর কর্তৃপক্ষের।
তারা বলছেন, বেনাপোল বন্দরে বছরে ২২ থেকে ২৪ লাখ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয় ভারত থেকে। এসব পণ্য রক্ষণাবেক্ষণে বন্দরে ৩৩টি শেড, ৩টি ওপেন ইয়ার্ড ও একটি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড আছে। আকারে ছোট পণ্যগুলো রাখা হয় শেডের ভেতর এবং বড় আকারের পণ্য রাখা হয় ওপেন ইয়ার্ডে। তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় তৈরি হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যাগারগুলো নিচু হওয়ায় বৃষ্টি বেশি হলে পানি নিষ্কাশনের অভাবে পণ্যাগার ও ইয়ার্ডে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলে বিঘœ ঘটে। বিভিন্ন সময় এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ব্যবসায়ীরা বন্দর কর্তৃপক্ষের শরণাপন্ন হলেও গুরুত্ব নেই তাদের।
বেনাপোল স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. সহিদ আলী জানান, একটু বৃষ্টি হলেই বেনাপোল স্থলবন্দরের বিভিন্ন স্থানে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে সাধারণ শ্রমিকরা কাজ করতে পারে না; সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি আমাদের।
সাধারণ শ্রমিকরা জানান, আমরা জীবন-জীবিকার জন্য এই বন্দরে  কাজের জন্য আসি। কিন্তু অবিরাম বৃষ্টির কারণে কোনো কাজ করতে না পেরে আমরা সবাই অলস সময় পার করছি। এক দিন বৃষ্টি হলে তিন দিন ধরে জলাবদ্ধতা থাকে।
বেনাপোল বন্দরের ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান বলেন, বন্দরে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় চলাচলে মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে। এর আগে কয়েকটি শেডে পানি ঢুকে অনেক আমদানিকারকের লাখ লাখ টাকার মালামাল ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। বন্দরের ভাড়া প্রতিবছর বাড়লেও তারা বন্দরের উন্নয়নে কোনো ভূমিকা নিচ্ছে না। অধিকাংশ অবকাঠামো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া তৈরি হওয়ায় বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। বারবার আশ^াস দিলেও স্থায়ী সমাধান করা হচ্ছে না।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সরকার এই বন্দর থেকে বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে থাকে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা একাধিকবার বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এত বড় বাণিজ্যিক স্থাপনায় বছরের পর বছর এই দুর্দশা চললেও সরকারের পদক্ষেপ না নেওয়া দুর্ভাগ্যজনক। বৃষ্টির পানি পণ্যাগারে ঢুকে মালামাল নষ্ট হলে লোকসানের শিকার হন ব্যবসায়ীরা।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক মামুন কবীর তরফদার বলেন, একটানা ভারি বৃষ্টির কারণে স্থলবন্দরের অভ্যন্তরে জমে থাকছে। গত ৯ জুলাই মেশিন দিয়ে মাটি কেটে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়। গত রোববার রাত থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত একটানা ভারি বৃষ্টিতে আবারও পানি জমে গেছে। সেটা দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, স্থায়ীভাবে সমাধান করতে হলে কমপক্ষে দুই বছর সময় লাগবে। এর সাথে কয়েকটি সরকারি সংস্থা জড়িত। যার যার প্রতিষ্ঠান থেকে আপাতত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে হবে যেমন, রেলওয়ে তাদের নিজস্ব তাদারকিতে পানি নিষ্কাশন করবে, সাথে কাস্টমসও তাদের মতো পানি নিষ্কাশন করবে এবং স্থায়ী কোনো প্রকল্প হাতে না নেওয়া পর্যন্ত এ পানি নিষ্কাশনের সঠিক সমাধান হওয়া সম্ভব নয়।