ইউরোপ সেরা প্যারিস সেইন্ট জার্মেইকে (পিএসজি) ফাইনালে ৩-০ গোলে হারিয়ে ক্লাব বিশ^কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে চেলসি। তাদের জয়ের নায়ক কোল পালমার। জোড়া গোল করেছেন তিনি। সতীর্থকে দিয়ে একটি করিয়েছেন তিনি। বড় মঞ্চে নিজের সেরাটা মেলে ধরলেন পালমার। নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে ৮২ হাজারের বেশি দর্শকের সামনে সব গোলই হয়েছে প্রথমার্ধে করেছে চেলসি। পালমার ছাড়া জোয়াও পেদ্রো গোল করেন। সেমিফাইনালে জোড়া গোল উপহার দিয়েছিলেন পেদ্রো।
ক্লাব বিশ^কাপের ফাইনাল যে এমন একপেশে হবে, সেটি কেউই ভাবেনি। কেননা দুর্দান্ত সময় কাটানো এ মৌসুমে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়সহ মোট ৪টি ট্রফি জিতে নেয় পিএসজি। এ ফাইনালেও তাদের এগিয়ে রাখা হচ্ছিল সবচেয়ে বেশি। আসরে আগের ৬ ম্যাচে তারা স্রেফ একটি গোল হজম করেছিল বোতাফোগোর বিপক্ষে বিস্ময়করভাবে ১-০ ব্যবধানে হারের দিনে। বিপরীতে গোল করেছিল মোট ১৬টি, যার চারটি সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে। কিন্তু চেলসির সামনে পাত্তাই পেল না লুইস এনরিকের দল। এন্টসো মারেস্কার কোচিংয়ে চেলসি মৌসুম শেষ করল দ্বিতীয় ট্রফি জিতে। গত মে মাসে তারা উয়েফা কনফারেন্স লিগ জয়ের স্বাদ পায় ফাইনালে রিয়াল বেতিসকে ৪-১ গোলে হারিয়ে। চেলসির এবারের সাফল্যে বড় অবদান আছে গোলরক্ষক রবার্তো সানচেসেরও। গোলের জন্য পিএসজি ৮টি শট নিয়ে লক্ষ্যে রাখতে পারে ৬টি, সবকটিই সেভ করেন সানচেস। যার ৪টি ছিল দুর্দান্ত। ৩৩ শতাংশের একটু বেশি সময় বল দখলে রেখে চেলসির ১০ শটের ৫টি লক্ষ্যে ছিল। সেমিফাইনালে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্লুমিনেসিকে ২-০ গোলে হারিয়ে আসা চেলসি আক্রমণাত্মক শুরু করে পিএসজির বিপক্ষে। অষ্টম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে পালমারের বাঁ পায়ের শট পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। ১৬ মিনিটে প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগ পায় শেষ চারে রিয়াল মাদ্রিদকে ৪-০ গোলে হারানো পিএসজি। ফাবিয়ান রুইসের চমৎকার পাস বক্সে ভালো পজিশনে পান দিজিরে দুয়ে, কিন্তু নিজে শট না নিয়ে আশরাফ হাকিমিকে পাস দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। বল ক্লিয়ার করেন চেলসির ডিফেন্ডার মার্ক কুকুরেইয়া। দুই মিনিট পর বক্সের বাইরে থেকে দুয়ের জোরালো নিচু শট ঝাঁপিয়ে এক হাতে ঠেকান সানচেস। ২২ মিনিটে এগিয়ে যায় চেলসি। গোলরক্ষকের লম্বা করে বাড়ানো বল ধরে বক্সে ঢুকে মালো গিস্তোর শট রক্ষণে প্রতিহত হওয়ার পর এই ডিফেন্ডার খুঁজে নেন পালমারকে। বাঁ পায়ের নিচু শটে বল জালে পাঠান ২৩ বছর বয়সি ইংলিশ উইঙ্গার। আট মিনিট পর দুর্দান্ত গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন পালমার। নিজেদের অর্ধ থেকে ডিফেন্ডার লিভাই কলউইলের উঁচু করে বাড়ানো বল ধরে প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারের বাধা এড়িয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন তিনি, জায়গা বানিয়ে বাঁ পায়ের আরেকটি নিচু শটে দুই খেলোয়াড়ের মাঝ দিয়ে খুঁজে নেন জাল। পিএসজিকে কোণঠাসা করে ৪৩ মিনিটে ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় চেলসি। এই গোলেও জড়িয়ে আছে পালমারের নাম। তিনি পাস দেন বক্সে, অফসাইডের ফাঁদ এড়িয়ে বক্সে ঢুকে প্রথম স্পর্শে গোলরক্ষকের পাশ দিয়ে বল জালে পাঠান জোয়াও পেদ্রো। চেলসির হয়ে তিন ম্যাচে পেদ্রোর গোল হলো তিনটি। নতুন ঠিকানায় প্রথমবার শুরুর একাদশে নেমেই ছেলেবেলার ক্লাব ফ্লুমিনেসির বিপক্ষে চোখধাঁধানো দুটি গোল করেছিলেন তিনি। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আরেকটি দারুণ সেভ করেন সানচেস। জোয়াও নেভেসের হেড ঝাঁপিয়ে ঠেকান তিনি। দ্বিতীয়ার্ধের অষ্টম মিনিটে অবিশ্বাস্য সেভ করে জাল অক্ষত রাখেন সানচেস। কাছ থেকে উসমান দেম্বেলের প্রচেষ্টা দারুণ ক্ষিপ্রতায় ঝাঁপিয়ে এক হাতে ব্যর্থ করে দেন ২৭ বছর বয়সি স্প্যানিশ গোলরক্ষক। ৬০ মিনিটে আরেকবার সানচেসের দৃঢ়তায় বেঁচে যায় চেলসি। ৩০ গজ দূর থেকে ভিতিনিয়ার জোরালো শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন তিনি। ৬৭ মিনিটে জোয়াও পেদ্রোর বদলি নামার পর প্রথম স্পর্শেই চমৎকার এক গোল পেতে যাচ্ছিলেন লিয়াম ডেলাপ। বক্সের বাইরে থেকে এ ইংলিশ স্ট্রাইকারের জোরালো শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান জানলুইজি দোন্নারুম্মা। ৮০ মিনিটে ডেলাপের আরেকটি প্রচেষ্টা আটকান ইতালিয়ান গোলরক্ষক। নির্ধারিত সময়ের পাঁচ মিনিট বাকি থাকতে ১০ জনের দলে পরিণত হয় পিএসজি। পেছন থেকে কুকুরেইয়ার চুল টেনে ধরায় ভিএআরের সাহায্যে পিএসজি মিডফিল্ডার জোয়াও নেভেসকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। বাকি সময়ে আর কেউ কিছু করতে পারেনি। শেষ বাঁশি বাজার পর হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে দুই দলের কয়েক জন। জোয়াও পেদ্রোর মুখে আঘাত করেন পিএসজি কোচ এনরিকে। ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর পাশে বসে শিরোপা লড়াই উপভোগ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে খেলোয়াড়, ম্যাচ অফিসিয়ালদের মেডেল ও চ্যাম্পিয়ন অধিনায়কের হাতে ট্রফি তুলে দেন তারা।