ঢাকা শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫

ববিতে স্বৈরাচারের দোসরকে প্রক্টর করায় বিতর্ক শুরু

বরিশাল ব্যুরো
প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২৫, ১২:১৮ এএম

বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের (ববি) বিতর্কিত শিক্ষক ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসাইনকে প্রক্টর করা নিয়ে তুমুল বিতর্ক দেখা দিয়েছে। আওয়ামীপন্থি এই শিক্ষককে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নতুন দায়িত্ব দেওয়ার পরে জুলাই আন্দোলনের পক্ষের শক্তির মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসাইনকে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে অপসারণ দাবি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্টও করেছেন। 

অভিযোগ আছে, শিক্ষক সাখাওয়াত হোসাইন ২০২৩ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের নির্বাচন প্রচার কমিটির সদস্য ছিলেন। সেই নির্বাচনে তিনি নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিলেন, যা নিয়ে ওই সময় এই শিক্ষক গর্ব করতেন। তবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বৃহৎ একটি অংশ তাকে নীতিবিবর্জিত আখ্যায়িত করেছিলেন। সেই আদর্শচ্যুত শিক্ষক সাখাওয়াত হোসাইনকে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে এক ধরনের পদোন্নতি দেওয়া হলো। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দীন স্বাক্ষরিত এক পত্রে এই আদেশ প্রকাশের পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দেয়।  

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র আন্দোলনে চাপের মুখে তৎকালীন প্রক্টর ড. মো. আব্দুল কাইউম পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় ড. রাহাত হোসেন ফয়সালকে। তিনি অব্যাহতি নিলে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব পান ড. এ টি এম রফিকুল ইসলাম। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ড. রফিকুল পদত্যাগ করলে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব পান ড. সনিয়া খান সনি। কিন্তু গত পাঁচ মাস ধরে প্রক্টর ড. সনি অনেকটা নিষ্ক্রিয় থাকায় সর্বশেষ বৃহস্পতিবার আওয়ামীপন্থি ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াত ওই পদে স্থলাভিষিক্ত হলেন। মূলত তাকে প্রক্টর করার পরেই দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া, যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপ ‘লিংকার্স ইন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে’ শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। 

এ নিয়ে সংক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, নতুন প্রক্টর সাখায়াত হোসাইন ২০২৩ সালে বরিশাল সিটি নির্বাচনে নৌকা মার্কার নির্বাচন প্রচারণা কমিটির ৬ নম্বর সদস্য ছিলেন। ওই সময় বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হলেও তিনি গায়ে মাখেননি, বরং স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। তিনি আওয়ামী ঘরানার ভিসিদের সময় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এমন একজন দলবাজ শিক্ষককে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় জোরাল বিতর্ক শুরু হয়েছে।

এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শিক্ষার্থী ও জুলাই আন্দোলনের সামনের সারির যোদ্ধা সুজয় শুভ। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভয় দিয়েছিল, আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে যুক্ত কাউকে প্রশাসনিক দায়িত্ব দেওয়া হবে না। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেই পণ ভেঙেছে, (উপাচার্য) আওয়ামী লীগের দোসরদের পুনর্বাসন করছে। আওয়ামীপন্থি শিক্ষক ড. সাখাওয়াত স্যার বরিশাল সিটি নির্বাচনে নৌকার নির্বাচন প্রচারণা কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। এ নিয়ে তখন অনেকের আপত্তি থাকলেও তাকে আওয়ামী ঘরানার ভিসিরা নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন। সেই শিক্ষককে আবার এক ধরনের পদোন্নতি দিয়ে প্রক্টর করা হয়েছে, যা জুলাই আন্দোলনের সাথে বেঈমানির শামিল বলে মন্তব্য করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সুজয়। 
দলবাজ শিক্ষককে প্রক্টর করার বিষয়ে জানতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দীনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও অপরপ্রান্ত থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।  

বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, এই চলমান বিতর্ক নিয়ে মোটেও বিচলিত নন নতুন প্রক্টর ড. সাখাওয়াত হোসাইন। তিনি মুঠোফোনে রূপালী বাংলাদেশকে বলেছেন, চিঠি পেয়েছেন এবং আগামী দিনগুলোতে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা চান।