আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে হবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) নতুন আসর। সম্ভাব্য সূচি অনুযায়ী ১৯ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ১৬ জানুয়ারি শেষ হতে পারে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট। নভেম্বরের শুরুর দিকে হতে পারে বিপিএলের প্লেয়ার্স ড্রাফট। এরই মধ্যে প্লেয়ার্স ড্রাফট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। গত আসরে তুমুল সমালোচনা ও বিতর্কের মুখে পড়েছিল বিপিএল। গত আসর তাড়াহুড়ো করে আয়োজন করতে গিয়ে ভজকট পাকানোয় দায় পড়ে সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদের ওপর। এবার সব ধরনের বিতর্ক ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর জন্য অবশ্যপালনীয় কিছু শর্ত রাখার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তবে নানা কারণে আসন্ন বিপিএল সঠিক সময়ে আয়োজন করার ক্ষেত্রে বিসিবির সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।
নতুন বিপিএল আসরে কয়টি ফ্র্যাঞ্চাইজি অংশ নেবে, বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে জানা গেছে, আগামী বিপিএলে পাঁচটি ফ্রাঞ্চাইজি থাকতে পারে। ফ্র্যাঞ্চাইজি খোঁজার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্যসচিব ইফতেখার রহমান মিঠু বলেছেন, ডিসেম্বরে সঠিক সময়ে বিপিএল আয়োজন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তারা। টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দল নিতে এক্সপ্রেস অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) আহ্বান করেছে বিসিবি। এই প্রক্রিয়া শেষ হবে ২৮ অক্টোবর। এরপর আগ্রাহী ফ্র্যাঞ্চাইজির আবেদন, আর্থিক সক্ষমতা ও মালিকানার বৈধতা যাচাই করা হবে। আর এখানে থাকছে চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে, আগামী বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় শুরু হবে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপ আসর। ফলে জাতীয় দলকে পর্যাপ্ত প্রস্তুতির সুযোগ দিতে ফেব্রুয়ারির আগেই বিপিএল শেষ করার পরিকল্পনা বিসিবির। তাই স্বল্প সময়ে টুর্নামেন্ট গোছালোভাবে আয়োজনের বাড়তি চ্যালেঞ্জও থাকছে বিসিবির সামনে। এ ছাড়া নানা চুক্তি ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি, বিপণন, স্পনসর ও সম্প্রচার স্বত্ব, ক্রিকেটারদের বাজার ও ড্রাফটের জটিলতা, মাঠ প্রস্তুতি, সরঞ্জাম ও লজিস্টিকস সাপোর্ট, নিরাপত্তা ও হোটেল ব্যবস্থাপনাসহ আরও অনেক কিছুর বিষয়ও আছে। এসব কিছুর সমন্বয় না হলে আবার বিপিএলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ ছাড়া আর্থিক সম্মতি, গ্যারান্টি মানিÑ এসব প্রক্রিয়ারও বিষয় রয়েছে। অন্যদিকে, বিপিএলের অর্থনৈতিক কাঠামো এখনো দোদুল্যমান। বিপণন ও সম্প্রচার স্বত্ব বণ্টন নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
স্পনসরশিপ, ব্রডকাস্ট পার্টনার, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মÑ সবকিছু আলোচনার পর্যায়েই রয়েছে। প্রয়োজন হবে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের। আগের আসরগুলোতেও সম্প্রচার স্বত্ব দেরিতে চূড়ান্ত হওয়ায় আয়োজনে তা প্রভাব পড়েছিল। এবারও সেই আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। এ ছাড়া প্লেয়ার্স ড্রাফট আয়োজনের আগে ফ্র্যাঞ্চাইজি নিশ্চিত করতে হবে। যে সময় বিপিএলে আয়োজন করা হবে, সে সময় বড় নামের ক্রিকেটার পাওয়া কঠিন হবে। কেননা, এ সময় আরও চারটি লিগ হবে। ১৪ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে বিগ ব্যাশ লিগ। ২৭ নভেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর হবে শ্রীলঙ্কান প্রিমিয়ার লিগ। আইএল টি-টোয়েন্টি, এসএ টোয়েন্টি লিগও রয়েছে। তাই সেখানে অনেক ক্রিকেটার আগেই চুক্তিবদ্ধ হয়ে গেছেন। লঙ্কান লিগের কারণে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদেরও পাওয়া যাবে না বিপিএলে। সম্পতি পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের বিদেশি লিগে খেলার অনুমতিও বাতিল করেছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।
তাই মানসম্পন্ন বিদেশি ক্রিকেটার আনা সহজ হচ্ছে না। অন্যদিকে, বিপিএলের মাঠ ও অবকাঠামো প্রস্তুত করার ব্যাপারও আছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটের বাইরে যদি রাজশাহী বা খুলনা নতুন ভেন্যু হিসেবে যুক্ত হয়, সেখানেও নতুন করে ক্যামেরা, প্ল্যাটফর্ম, ফ্লাডলাইট, মিডিয়া সুবিধাÑ সব তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে বিদেশি খেলোয়াড় থাকা মানেই বাড়বে নিরাপত্তার চাপ। সব মিলিয়ে বিপিএলের নতুন আসর আয়োজন করতে গিয়ে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বিসিবিকে। এসব চ্যালেঞ্জ জয় করে বিপিএল সঠিক সময় আয়োজন করতে পারে কি না বিসিবি, সেটিই দেখার বিষয়।