ঢাকা শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৫

মিরপুরে সৌম্য-সাইফের ‘ম্যাজিক্যাল’ ব্যাটিং

মাঠে ময়দানে প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২৫, ০১:৩৮ এএম

মিরপুরে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে স্কোর বোর্ডে পর্যাপ্ত রান দেখা যায়নি। দুটি ম্যাচই হয়েছে লো স্কোরিংয়ের। গতকাল সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ও শেষ ম্যাচেও মিরপুরের কালো মাটির উইকেটে স্কোর বোর্ডে রান উঠবে না সেভাবে, সেটিই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু দুই ম্যাচ পরই উল্টো রূপ দেখা গেল মিরপুরের উইকেটে। এই উইকেটে ‘ম্যাজিক্যাল’ ব্যাটিংই উপহার দিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও সাইফ হাসান। ক্যারিবিয়ানদের তুলোধুনো করে ছাড়লেন তারা। চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছড়িয়ে স্কোর বোর্ডে দ্রুতগতিতে রান যোগ করেন এ দুই ওপেনার। উদ্বোধনীতে ১৭৬ রানের জুটি গড়েন তারা। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে উদ্বোধনী জুটিতে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। এর আগে ২০২০ সালে উদ্বোধনী জুটিতে তামিম ইকবাল ও লিটন দাস সর্বোচ্চ ২৯২ রান তুলেছিলেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে দুই দল মিলিয়ে কোনো জুটি পারেনি শতরানের ধারেকাছে যেতে। ব্যাটসম্যানদের ভোগান্তির সিরিজে এবার দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। ১৬তম ওভারে দলের রান স্পর্শ করে তিন অঙ্ক। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের দুর্দশা শুধু এই সিরিজে নয়, চলছিল অনেক দিন ধরেই। বিশেষ করে টপ অর্ডারে। সেটিই আরেকবার মনে করিয়ে দিয়েছে সৌম্য ও সাইফের এই জুটি। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ শুরুর জুটিতে শতরান পেল ৪৫ ইনিংস পর! এর আগে সবশেষ উদ্বোধনী জুটিতে শতরান দেখা গিয়েছিল ২০২৩ সালের মার্চে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১০২ রান করেছিলেন তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার দাস। সেই জুটির পর এই ম্যাচের আগ পর্যন্ত ৪৫ ইনিংসে স্রেফ সাতবার অর্ধশত রান ছুঁয়েছে বাংলাদেশের শুরুর জুটি। এ বছর আগের ১০ ওয়ানডেতে সেরা জুটি ছিল স্রেফ ৪৫ রানের।

এবার সেই হতাশার অধ্যায় পেছনে পড়ল সৌম্য ও সাইফের ব্যাটে। অথচ প্রথম ম্যাচের উইকেটেই হচ্ছে এই ম্যাচ, যে ম্যাচে ধুঁকেছিলেন দুই দলের ব্যাটসম্যানরাই। এই ম্যাচেও উইকেটে টার্ন দেখা গেছে বেশ। তবে আগের চেয়ে এদিন বল ব্যাটে এসেছে ভালোভাবে। সাইফ ও সৌম্য খেলেছেনও দুর্দান্ত। ইঙ্গিতটা অবশ্য ছিল শুরুতেই। আকিল হোসেনের প্রথম ওভারেই সাইফ হাসানের ২টি চারে শুরু হয় বাংলাদেশের ইনিংস। আকিলকেই পরে ছক্কায় উড়িয়ে দেন সাইফ। একটু পরে আক্রমণ শুরু করেন সৌম্যও। দুজনের ব্যাটে দলের রান বাড়তে থাকে দ্রুত। ৪৮ বলে ফিফটি করেন সৌম্য।

ষষ্ঠ ওয়ানডে খেলতে নামা সাইফ প্রথমবার পঞ্চাশে পা রাখেন ৪৪ বলে। সাইফের ছক্কাতেই দলের শতরান আসে ষোড়শ ওভারে। শেষ পর্যন্ত ১৭৬ রানে ছিন্ন হয় দুজনের উদ্বোধনী জুটি। ৬টি করে ছক্কা ও চারে ৭২ বলে ৮০ রান করে রোস্টন চেইসের বলে সীমানায় ধরা পড়েন সাইফ। এই ইনিংস খেলার পথে তিনি একবার বেঁচে যান রিভিউ নিয়ে। অবশ্য সেঞ্চুরির খুব কাছে থাকলেও সৌম্য সরকার আক্ষেপ নিয়েই ড্রেসিংরুমে ফিরলেন। ব্যক্তিগত ৯১ রানে আউট হন এই ওপেনার।

আফসোস থাকলেও সাইফের সঙ্গে যে জুটি উপহার দিলেন সৌম্য, এ জুটিতে রেকর্ড হয়ে গেছে আরও কিছু। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে যে কোনো উইকেটে বাংলাদেশের সেরা জুটি এটিই। আগের সেরা ছিল ২০১৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ইমরুল কায়েস ও এনামুল হকর ১৫০। সেটিও ছিল শুরুর জুটিতেই। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেরা উদ্বোধনী জুটি এটি। তারা পেরিয়ে গেছেন ১৯৯৯ সালে মেহরাব হোসেন ও শাহরিয়ার হোসেনের ১৭০ রানের জুটি। ২০২০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেটে তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের ২৯২ রানের জুটি সবার ওপরে।