ঢাকা সোমবার, ১২ মে, ২০২৫

কুড়িগ্রামে মেয়েকে হত্যার অভিযোগে বাবা গ্রেপ্তার 

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ১২, ২০২৫, ০২:১৭ পিএম
স্কুলছাত্রী জান্নাতির মা আহাজারি করে কান্না করছেন। ছবি-সংগৃহীত

কুড়িগ্রামে মেয়েকে হত্যার অভিযোগে বাবাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া জিজ্ঞসাবাদের জন্য জান্নাতির মা ও চাচিকে আটক করা হয়েছে।

রোববার (১১ মে) কুড়িগ্রাম সদর থানার ওসি মো. হাবিবুল্লাহ গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এর আগে শনিবার (১০ মে) সকালে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের কাগজিপাড়া গ্রামে বাড়ির পাশের কৃষি জমি থেকে জান্নাতির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ঘটনায় জান্নাতির বড় চাচা খলিল বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহত স্কুল শিক্ষার্থী জান্নাতির বাবা জাহেদুলের দেওয়া তথ্যমতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করেছে পুলিশ। 

তবে জান্নাতির পরিবারের দাবি, জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের লোকজন রাতের বেলা জান্নাতিকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে ফেলে রাখে। তবে তাদের এমন দাবির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।

এলাকাবাসী জানায়, জান্নাতির বাবা জাহেদুল ও চাচা খলিলের সঙ্গে একই এলাকার মকবুল পাটোয়ারি গংয়ের জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। এ ছাড়াও খলিল ও জাহেদুলের আপন ছোট ভাই রফিকুলের সঙ্গেও জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলমান।

এসব নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে মামলাও রয়েছে। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গরু-ছাগল চুরি, খড়ের গাদায় আগুন দেওয়াসহ পরস্পরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। 

স্থানীয়রা জানান,  জাহেদুল ও তার বড় ভাই খলিল জমি নিয়ে তাদের আপন ভাই রফিকুল ও তার স্ত্রী হালি বেগমকেও মারধর করেন। রফিকুল বাদী হয়ে মামলাও করেছেন। জাহেদুল ও খলিল প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ছোট ভাই রফিকুল ও তার স্ত্রীকে মারার হুমকি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ হালি বেগমের।

হালি বেগম বলেন, ‘স্বামীর আপন ভাই খলিল, জাহেদুল ও একরামুলরা পিটিয়া আমার হাত-পা ভাঙি দিছে। স্বামীসহ আমাক মারার বুদ্ধি করছিল। আমাদেক মারি ফেলে মাইনষক ফাঁসাইবে। এটা জানার পর আমি বাড়ি ছাড়ি গেছিলাম।’

জাহেদুলের বড় ভাই ও জান্নাতির চাচা রফিকুল বলেন, ‘জাহেদুল খুব খারাপ লোক। খলিল আর একরামুল মিলিয়া আমাক মারিয়া পাটোয়ারিসহ খন্দকার গোষ্ঠিক ফাঁসার প্লান করছিল। ওরা আমাক পাইলে এক ঘণ্টার মধ্যে মারি ফেলাইবে। ওরা নিজের মেয়েক নিজে মারছে।’

আপন ভাইদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণ নিয়ে জানতে চাইলে রফিকুল বলেন, ‘আমার পাঁচ বিঘা জমি ওরা আবাদ করতে দেয় না। আমি বন্ধক রাখছি। সেই বন্ধক নেওয়া লোকদেরও জমিতে নামতে দেয় না। এ নিয়ে আমাক ও আমার স্ত্রীক মারধর করি মারি ফেলাইতে ধরছে। আমি মামলাও করছি।’

জান্নাতি হত্যাকাণ্ডের দিন তার চাচা খলিল প্রতিপক্ষের কয়েক জনের নাম উল্লেখ করে দাবি করেন, ‘আমরা হত্যাকারীদের চিনি। তারা জান্নাতিকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারি ফেলছে।’

তবে জাহিদুল, তার স্ত্রী মোর্শেদা ও খলিলের স্ত্রী কহিনুরকে পুলিশ আটক করার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। 

ওসি হাবিবল্লাহ বলেন, ‘তদন্তে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় জান্নাতির বাবা জাহেদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের কিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জান্নাতির মা ও চাচিকে জিজ্ঞসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় আর কারো সম্পৃক্ত আছে কি না, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। তদন্তের স্বার্থে এ মহূর্তে বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়।’