নওগাঁর মান্দা উপজেলায় বার্ষিক উন্নয়ন তহবিলের (এডিবি) আওতায় তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে অর্থ হরিলুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকল্পের কাগজপত্রে কাজ সম্পন্ন দেখানো হলেও বাস্তবে এসব প্রকল্পের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এডিবির আওতায় পাঁজরভাঙা বিশ্ববাঁধ হতে ছাদের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সিসিকরণের জন্য ৩ লাখ টাকা, প্রসাদপুর বাজার এলাকায় পানি নিষ্কাশনের ড্রেন সংস্কারের জন্য ৩ লাখ টাকা এবং তেঁতুলিয়া ইউনিয়নে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় রাস্তার দু’পাশে ওষুধি গাছের চারা রোপণের মাধ্যমে বনায়নের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। উপজেলা এলজিইডি অফিসের তালিকায় প্রকল্প তিনটি যথাক্রমে ৫৬, ১২৬ ও ১৩৯ নম্বরে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
কাগজপত্রে দেখা যায়, ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে উপজেলা পরিষদের বিশেষ সভায় পাঁজরভাঙা বিশ্ববাঁধ হতে ছাদের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সিসিকরণ ও প্রসাদপুর বাজারে ড্রেন সংস্কার এবং চলতি বছরের মার্চ মাসের সভায় তেঁতুলিয়া ইউনিয়নে রাস্তার দু’পাশে ওষুধি গাছের চারা রোপণ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।
তবে সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সংশ্লিষ্ট স্থানগুলোতে কোনো ধরনের উন্নয়ন কাজ হয়নি। প্রসাদপুর বাজারের ব্যবসায়ী আবু বক্কর সিদ্দিক, চা দোকানি আবুল কালাম আজাদসহ আরও অনেকে জানান, বাজারের পানি নিষ্কাশনের ড্রেনটি নির্মাণের পর থেকে আর কোনো সংস্কার করা হয়নি। বৃষ্টি হলেই পানি জমে বাজারের রাস্তা তলিয়ে যায়, তখন দুর্ভোগের শেষ থাকে না।
বাজারের মুড়ি বিক্রেতা গৌতম কুমার বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে ড্রেনের পাশেই দোকান করছি। কোনো কাজ হলে অবশ্যই নজরে পড়ত। এটি শুভঙ্করের ফাঁকি ছাড়া আর কিছুই নয়।’
অন্যদিকে পাঁজরভাঙা বাজারে বিশ্ববাঁধ থেকে ছাদের বাড়ি পর্যন্ত কোনো রাস্তা চিহ্নিত করা যায়নি এবং তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের রাস্তায় বনায়ন কাজেরও কোনো হদিস মেলেনি।
উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর থেকে পাওয়া কাগজপত্রে পাঁজরভাঙা এলাকায় সিসিকরণ কাজ টেন্ডারের মাধ্যমে, প্রসাদপুর বাজারের ড্রেন সংস্কার আরএফকিউ পদ্ধতিতে এবং তেঁতুলিয়া ইউনিয়নে বনায়ন কাজ পিআইসি’র মাধ্যমে বাস্তবায়ন দেখানো হয়েছে। তবে প্রকল্পগুলো কে বাস্তবায়ন করেছে— সেই বিষয়ে স্পষ্ট কোনো জবাব দিতে পারেননি এলজিইডি কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান কামরুল বলেন, ‘রাস্তার পাশে বনায়ন কাজটি উপজেলা পরিষদ থেকে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী আবু সায়েদ বলেন, ‘আমি এ উপজেলায় যোগদানের আগেই কাজগুলো সম্পন্ন হয়েছে। কাগজপত্র না দেখে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আখতার জাহান সাথী বলেন, ‘প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকলে কাজটি বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


-20251103101421.webp)
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন