চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের খুরুশিয়া ভোলা টিলাতে ভূমিহীন পরিবারের দুটি ঘর উচ্ছেদ করার সময় বনবিভাগ ও গ্রামবাসীর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে বনবিভাগের কর্মকর্তারা ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ এবং বেধড়ক লাঠিচার্জ চালালে ২ জন বনকর্মী ও ৬ গ্রামবাসী আহত হন।
এছাড়া দুইজনকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ৯ ডিসেম্বর। তবে দুই দিন অতিবাহিত হলেও এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে এলাকার মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উচ্ছেদ অভিযানে খুরুশিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান, পোমরা রেঞ্জ কর্মকর্তা রিয়াদুর রহমান, দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তা সহ ৩৫ জনের একটি টিম অংশ নিয়েছিল।
তারা প্রথমে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে উচ্ছেদ কাজ শুরু করলে ভূমিহীন পরিবারের সদস্যরা প্রতিবাদ করেন। বনবিভাগের ফরেস্টাররা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ও লাঠিচার্জ ব্যবহার করেন।
আহত পরিবারগুলোর মধ্যে রয়েছেন: আহমদ নবী (৬৫) ও তার স্ত্রী জাহানারা বেগম (৫০), ইউছুফ নবীর স্ত্রী কহিনুর আক্তার (৪০), ইয়াকুব নবী (৫০), ইয়াকুব নবীর স্ত্রী আয়েশা (৪২) ও মেয়ে নিশু আক্তার (২৫)।
আহত বনকর্মীরা হলেন: শহিদুল (৩৭) ও নয়ন (৪৪)। কহিনুর আক্তারের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, শত বছর ধরে ভূমিহীন পরিবারগুলো ভোলা টিলায় বসবাস করে আসছে। পূর্বপুরুষরা নদী ভাঙনের এলাকা থেকে এসে সরকারি পরিত্যক্ত পাহাড়ি জায়গা আবাদ করেছিলেন। এখানে মসজিদ, মন্দির, মাদরাসা সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
তবে সম্প্রতি দুটি বাড়ি উচ্ছেদ নিয়ে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত প্রভাব প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে। উচ্ছেদকৃত দুটি ঘরে ২০ সদস্যের পরিবার বসবাস করত। উচ্ছেদের পর পরিবারের সদস্যরা শীতে খোলা আকাশের নিচে রাতযাপন করতে বাধ্য হন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বনবিভাগের কর্মকর্তারা ঘর দুটি উচ্ছেদে অনৈতিক উদ্দেশ্য ও আর্থিক প্রভাব প্রয়োগ করেছেন। আহমদ নবীর পুত্রবধূ সামিরা দাবি করেছেন, বন কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সময়ে টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে খুরুশিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হাসান বলেন, বনবিভাগের কর্মকর্তারা তাকে এই উচ্ছেদ অভিযান সম্পর্কে জানিয়েছিলেন এবং বিষয়টি তিনি পর্যবেক্ষণ করছেন।
স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, পরিস্থিতি যে কোনো সময় আরও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে।



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন