বান্দরবানের লামা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আলামত হিসেবে জব্দকৃত বিরোধপূর্ণ ‘গর্জন গাছ’ মামলার বাদী পক্ষের কেয়ারটেকার মোজাম্মেল ও থানা পুলিশের এসআই আলমগীরের যোগসাজশে আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে।
গত সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে প্রায় দেড় শত ফুট (২৪ টুকরা) গর্জন কাঠ থানায় নেওয়ার কথা বলে আত্মসাৎ করার সময় স্থানীয়রা হাতেনাতে ধরেন।
স্থানীয় সূত্র জানান, লামা থানার এসআই আলমগীর দুটি গাড়িতে গর্জন কাঠগুলো লোড করে থানার উদ্দেশে রওনা দেন। এর মধ্যে একটি গাড়ি থানায় পৌঁছালেও অপরটি থানায় না নিয়ে একটি স্থানীয় করাতকলে আনলোড করতে দেখা যায়। একই সঙ্গে মেরাখোলা গ্রামের রাস্তার আশপাশে ওই বাগানের বেশ কিছু গাছের টুকরো পড়ে থাকতে দেখা যায়, যা প্রশাসনিক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
করাতকলে আনলোড করার সময় কাঠ বোঝাই গাড়ির ড্রাইভার মনির বলেন, ‘আমাকে এই কাঠগুলো যেখানে আনলোড করতে বলা হয়েছে আমি সেখানে আনলোড করছি। এটার পরিবহন ভাড়া দিয়েছে মেরাখোলার মোজাম্মেল।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, দু’পক্ষের দাবি করা বাগান থেকে মামলার বিবাদীপক্ষ জোরপূর্বক ৩টি গর্জন গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করেন মালিক পক্ষের মো. শওকত আকবর। পরে লামার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বিরোধপূর্ণ কাঠগুলো মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করার নির্দেশ দেন।
এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মামলা তদন্তকারী এসআই আলমগীরও বাদীপক্ষের বাগান কেয়ারটেকার মোজাম্মেলের যোগসাজশে আরও ২টি গাছ কর্তন করার অভিযোগ উঠেছে। আদালতের নির্দেশে গাছের সবগুলো টুকরো জব্দ করার কথা থাকলেও এসআই আলমগীরের করা জব্দ তালিকায় মাত্র ৩৯ টুকরো দেখানো হয়েছে। বাকিগুলো মোজাম্মেলের সঙ্গে যোগসাজশে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
বিরোধপূর্ণ গর্জন কাঠ নিয়ে বাদী পক্ষের মামলা অনুযায়ী মামলার আইও এসআই আলমগীর ঘটনাস্থল তদন্তে গেলে দু-একজন সাংবাদিক কাঠের পরিমাণ জানতে চাইলে রাগান্বিতভাবে বলেন, ‘আপনি কোন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, যে আপনাকে বলতে হবে? আপনারাই গাছগুলো জব্দ করে থানায় নিয়ে যান!’ সাংবাদিকদের মতে, এই ধরনের উত্তর ভিন্ন ইঙ্গিত দেয়।
মামলার বিবাদী পক্ষের এক ভুক্তভোগী মাহবুব বলেন, ‘এসআই আলমগীরের থানা হেফাজত কি করাতকল? না হয় আদালতের আলামত হিসেবে জব্দ করা কিছু গাছ থানায় নিল, আর কিছু করাতকলে আনা হলো কেন? এই কাঠগুলো যখন মেরাখোলার মোজাম্মেলের লোক দিয়ে বাগান থেকে সরানো হচ্ছিল, আমি বাধা দিলে এসআই আলমগীর আমাকে মামলার জামিনে হস্তক্ষেপের হুমকি দেন এবং আদালতের নির্দেশ পরিপন্থী কাজ করে মোটা অঙ্কের টাকা নেন।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আলমগীর বলেন, ‘গাড়ি থানায় আসার পথে করাতকলে কেন ঢুকল, এ বিষয়ে আমি অবগত নই। তদন্তাধীন যেটুকু পেলাম, জব্দ তালিকায় তা দেখানো হয়েছে। বাকিটি পরবর্তী তদন্তে আসবে।’
লামা থানার ওসি মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। আদালতের জব্দকৃত গাছ করাতকলে আসার কথা না। তবে গাছগুলো করাতকলে কেন আনলোড করা হলো, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাউসার পিপিএম বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের অবগত হয়েছে। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’