চাঁদাবাজি একটি ঘৃণিত ও গর্হিত অপরাধ। এটি একপ্রকার দস্যুতা বা সন্ত্রাস। ইসলাম ধর্মে এটি হারাম এবং কবিরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত। যারা চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন পরকালীন শাস্তির হুঁশিয়ারি।
চাঁদাবাজি কেন হারাম?
ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখানে অন্যায়ের কোনো স্থান নেই। চাঁদাবাজি যেহেতু কারো কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করা, এটি সরাসরি জুলুম বা অন্যায়।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না এবং বিচারকের কাছে এমন কোনো মামলা করো না, যার মাধ্যমে জেনে-বুঝে কারো সম্পদ আত্মসাৎ করো।’ (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৮)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুসলমানের সম্পদ, তার আন্তরিক সম্মতি ছাড়া হস্তগত করলে তা হালাল হবে না।’ (বায়হাকি, শু‘আবুল ঈমান, হাদীস: ১৬৭৫৬)
চাঁদাবাজদের জন্য নির্ধারিত চার ধরনের শাস্তি
আল্লাহ তা’আলা তার জমিনে ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের জন্য চার ধরনের শাস্তির বিধান দিয়েছেন। চাঁদাবাজি যেহেতু একটি সন্ত্রাসমূলক অপরাধ, তাই এর জন্য নিচের যেকোনো শাস্তি প্রযোজ্য: হত্যা করা হবে, শূলে চড়ানো হবে (ফাঁসি), এক দিকের হাত ও বিপরীত দিকের পা কেটে ফেলা হবে, অন্য এলাকার জেলে বন্দি রাখা হবে তাওবা করার আগ পর্যন্ত।
আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দেশে ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, তাদের শাস্তি এই যে, তাদের হত্যা করা হবে, কিংবা শূলে চড়ানো হবে, অথবা তাদের এক দিকের হাত ও অন্য দিকের পা কেটে ফেলা হবে, অথবা তাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটা দুনিয়ায় তাদের জন্য লাঞ্ছনা এবং আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।’ (সূরা মায়িদাহ, আয়াত: ৩৩)
চাঁদাবাজির গুনাহ পরকালে চাপিয়ে দেওয়া হবে
চাঁদাবাজি শুধু দুনিয়ায় শাস্তির যোগ্য নয়, বরং আখিরাতে সে তার ভুক্তভোগীর পাপ নিজের ওপর বহন করবে, যদি ক্ষতিপূরণ না দেয়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের ওপর জুলুম করেছে, সে যেন তাকে ক্ষমা করিয়ে নেয়—অন্যথায় কিয়ামতের দিন কোনো দিরহাম বা দিনার থাকবে না। তখন মজলুমের গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।’
(সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১৮৮৫)
চাঁদাবাজ, তার সহযোগী ও ভোগকারীরা সবাই গুনাহগার
চাঁদা লেখক, উত্তোলনকারী, গ্রহণকারী ও উপভোগকারী-সবাই সমান অপরাধী। তারা আল্লাহর দৃষ্টিতে সরাসরি জালিম অথবা জালিমের সহযোগী হিসেবে গণ্য হবে।
আল্লাহ বলেন. শুধু তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যারা মানুষের ওপর জুলুম করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে বেড়ায়। বস্তুত, তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।’ (সূরা শুরা, আয়াত: ৪২)
চাঁদাবাজি শুধু আইনগত অপরাধ নয়-এটি একটি মারাত্মক ধর্মীয় গুনাহ। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি আল্লাহ ও রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। যারা এ কাজে জড়িত, তাদের উচিত খাঁটি তাওবা করে ক্ষতিগ্রস্তদের হক ফিরিয়ে দেওয়া এবং ভবিষ্যতে এ অপরাধ থেকে দূরে থাকা।