ঢাকা সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫

অটোরিকশায়  স্থবির আখাউড়া

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২৫, ০১:০৪ পিএম
অটোরিকশায়  স্থবির আখাউড়া। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ইজিবাইক আর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে। শহরের অলিগলিতে চলছে বেপরোয়া এসব যানবাহন। কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না এসব যানবাহনের দৌরাত্ম্য। কোনো নিয়মকানুন তোয়াক্কা না করে দিন দিন এসব যানবাহন সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া ও যত্রতত্রভাবে চলাচল করায় নিত্যদিন শহরে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ফলে পথচারীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১০-১২ বছরের ছেলে ও অনভিজ্ঞ লোকেরা অটোরিকশা চালানো পেশায় জড়িত রয়েছে। তারাই শহরের অলিগলিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কোনো নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে বেপরোয়া গতিতে চলার কারণে প্রতিনিয়তই বাড়ছে নানা দুর্ঘটনা। এদিকে সড়কে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত  কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে স্থানীয় লোকজনরা দাবি জানান।

এদিকে পৌর শহরের সড়ক বাজার এলাকার গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যত্রতত্র ভাবে রাখা আছে অসংখ্য ইজিবাইক আর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। শহরের প্রবেশ পথে মায়াবি সিনেমা হল, দুতলা মসজিদ, পৌরসভা, ঢাকা হোটেল, রেলওয়ে স্টেশন চত্বর, লালবাজার, বাইপাসসহ বেশ কয়েকটি স্থানে এসব যানবাহন রেখে যাত্রী উঠা-নামা করানো হচ্ছে । তা ছাড়া এসব যানবাহন চলছে বেপরোয়া গতিতে। কে কার আগে যাবে, চলছে সেই প্রতিযোগিতা। বিশেষ করে অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকদের মধ্যে এই প্রতিযোগিতা বেশি দেখা যায়। এসব যানবাহনে লাগানো হয়েছে হাইড্রোলিক হর্নের ফলে হচ্ছে শব্দদূষণও। তা ছাড়া সড়কের উভয় পাশে ফুটপাতে বিভিন্ন ফলফলাদির দোকান বসায় শহরে প্রতিনিয়ত যানজট লেগে আছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ওষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের রাখা মোটরসাইকেলগুলো যত্রতত্র রাখায় যানজট যেন আরও বাড়ছে। যানজটের কারণে পথচারীদের হেঁটে চলারও যেন কোনো উপায় নেই। বিশেষ করে শিক্ষার্থী, মহিলা ও শিশুদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে।

পথচারী মো. আবুল হোসেন বলেন, বর্তমানে অটোরিকশার জন্য বাজারে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করা যায় না। সড়কে দ্রুতগতিতে চলাচল করায় প্রায়ই তারা গায়ের ওপর উঠিয়ে দেয়। বর্তমানে যাত্রীর চেয়ে সড়কে অটোরিকশার পরিমাণ অনেক বেশি।

মো. গোলাম ফারুক বলেন, আখাউড়া এমনিতেই ছোট শহর। এরপর রয়েছে তীব্র যানজট। যানজটের কারণে ৫ মিনিটের রাস্তা যেতে লাগছে ১৫ মিনিটের ওপর। যানজটের কারণে প্রায় সময় ট্রেন পাওয়া যায় না বলে জানায়।

অটোরিকশা চালক মানিক বলেন, গত প্রায় ৪ বছর ধরে অটোরিকশা চালাচ্ছি।  কিন্তু বছরখানেক ধরে যে হারে অটোরিকশা বাড়ছে তা চিন্তার বাইরে। ছোট শহরে অতিরিক্ত গাড়ি থাকার কারণে অনেক সময় ১০ মিনিটের পথ যাইতে ২০ মিনিট লেগে যায়। এতে যেমন সঠিক সময়ে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছানো যাচ্ছে না তেমনি আয়ও কমে গেছে অনেক।

অটোচালক সুমন বলেন, পরিবারে মা, বাবা, দুই বোন রয়েছে। এরমধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বাবা অসুস্থ। ঘরে উপার্জন করার কেউ নেই। তাই বাধ্য হয়ে অটোরিকশা চালাচ্ছি।

অটোচালক মো. ইকবাল বলেন, অনেক কষ্টে ধার-দেনা করে কাতারে যাওয়া হয়। সেখানে বেশ কয়েক বছর থাকার পর হঠাৎ কোম্পানি দেশে পাঠিয়ে দেয়। পরিবারে স্ত্রী-সন্তান আর মা থাকায় জীবিকার প্রয়োজনে অটোরিকশা ক্রয় করে চালাচ্ছি। তবে দিন দিন গাড়ি বাড়ছে বলে জানায়।

আখাউড়া থানার ওসি মো. ছমিউদ্দিন বলেন, এই শহরে যানজটমুক্ত রাখতে ট্রাফিক ও ট্রাফিক পুলিশ নিয়মিত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।