চট্টগ্রামের পটিয়ায় হৃদয়বিদারক এক ঘটনার শিকার হয়েছে কলেজপড়ুয়া এক শিক্ষার্থী। এইচএসসি পরীক্ষার দিন সকালে পরীক্ষাকেন্দ্রে বসেই বিষাক্ত সাপের কামড়ে গুরুতর আহত হন মো. সাগর (১৯)। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অথচ এই পরীক্ষাটিই ছিল তার জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
সাগর পটিয়া উপজেলার কোলাগাঁও ইউনিয়নের নলান্দা গ্রামের ফরিদুল আলমের ছেলে এবং হুলাইন সালেহ নূর ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী।
সোমবার (৭ জুলাই) সকালে আইসিটি বিষয়ের পরীক্ষার সময় এ ঘটনা ঘটে খলীল মীর ডিগ্রি কলেজের পরীক্ষাকেন্দ্রে।
সাগরের মা জেসমিন আক্তার বলেন, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পরীক্ষা শুরুর ঠিক আগে হলরুমে বসে থাকা অবস্থায় হঠাৎ একটি বিষাক্ত সাপ তার ছেলেকে কামড়ে দেয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে অন্য পরীক্ষার্থীরা চিৎকার শুরু করলে সাগরকে দ্রুত উদ্ধার করে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে তাকে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলে পরিবারের পক্ষ থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, যাতে সাগর বাকি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে।
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, দুপুর ১টার মধ্যে যদি সাগর পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত হয়, তবে পরীক্ষা দিতে পারবে। এই আশ্বাসে পরিবারের সদস্যরা কাঁদতে কাঁদতে হাসপাতাল থেকে ছেলেকে নিয়ে মেডিকেলের বন্ড সাইন করে আবার পরীক্ষাকেন্দ্রে হাজির হন। কিন্তু বাস্তবতা ছিল নিষ্ঠুর—কেন্দ্রে পৌঁছানোর মাত্র ১৫ মিনিট পরই তার খাতা নিয়ে নেওয়া হয়।
সাগরের পরিবারের দাবি, এমন মানবিক সংকটে একজন শিক্ষার্থীর জন্য কিছুটা সময় বা বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। ‘আমার ছেলেটার কী দোষ? পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই সাপ কামড়েছে। আমরা সময়মতো এসে হাজির হয়েছি, কিন্তু তাও সে পরীক্ষা দিতে পারল না।’ আক্ষেপ করে বলেন সাগরের মা।
পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. সামিহা রওশন বলেন, ‘সাগরকে সকালেই হাসপাতালে আনা হয়। বিষাক্ত সাপের কামড়ের কারণে তাকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল।’
এদিকে পুরো এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে সহানুভূতির ঢল। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, শিক্ষা বোর্ড ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে যেন সাগরের জন্য বিশেষ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।
সাগরের পরিবার ও স্থানীয়দের একটাই আকুতি, ‘একটি বিষাক্ত সাপ যেন একটি শিক্ষার্থীর স্বপ্ন কেড়ে না নেয়।’ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে যেন তাকে বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, এমনটাই এখন সময়ের দাবি।
আপনার মতামত লিখুন :