ঢাকা শনিবার, ০৭ জুন, ২০২৫

গরুর জন্য ‘আবাসিক হোটেল’, থাকছে যেসব সুবিধা

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২৫, ০৬:০৬ পিএম
গরুর জন্য ‘আবাসিক হোটেল’ দিয়েছেন গরু ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম। ছবি-সংগৃহীত

চুয়াডাঙ্গায় এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন গরু ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম। তিনি মানুষের থাকার জন্য নয়, গরুর থাকার জন্য গড়ে তুলেছেন একটি আবাসিক হোটেল। যেখানে একদিন গরু রাখার জন্য গুনতে হবে ৫০০ টাকা ভাড়া।

এ হোটেলে গরুর গোসল ও দিনে চার বেলা খাবারের সুব্যবস্থা রয়েছে। শুধু থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাই নয়, গরু হাঁটাচলার জন্যও রয়েছে মনোরম পরিবেশ। এমন অভিনব উদ্যোগ নিয়ে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন এই উদ্যোক্তা। জেলার দামুড়হুদা উপজেলার ডুগডুগি বাজারে তিনি এই হোটেল গড়ে তুলেছেন, যা ইতিমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলার অন্যতম বড় গরুর হাট—ডুগডুগি হাটের পাশেই একটি আমবাগানের ভেতর ‘আরিফ গবাদি প্রাণীর হোটেল কাম ওয়্যারহাউস’ তৈরি করেছেন আরিফুল ইসলাম। হাটে আসা গরু ক্রেতারা তাদের কেনা গরু এখানে রেখে অন্য হাটে যেতে পারছেন নতুন গরু কিনতে।

এই হোটেলে গরু রেখে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন ব্যাপারীরা। গরু দেখভালের জন্য রয়েছে প্রশিক্ষিত কর্মী। তারা গরুকে গোসল করান ও নিয়মিত তিন থেকে চার বেলা খাবার সরবরাহ করেন।

হোটেল মালিক আরিফুল ইসলাম জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে গরু কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত। ঢাকা ও অন্যান্য দূরবর্তী জেলা থেকে আসা ব্যাপারীদেরও কেনাবেচায় সহায়তা করে থাকেন। তিনি লক্ষ্য করেন, একটি গরু কেনার পর আরেকটি গরু কিনতে গেলে আগেরটি কোথায় রাখবেন—সে চিন্তায় পড়েন অনেকে। এই সমস্যার সমাধান দিতেই তিনি গরুর হোটেলটি তৈরি করেন।

আরিফুল আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে হোটেলটি চালু করেছি। আপাতত ১৭টি গরু রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। কেউ চাইলে ছাগলও রাখতে পারবেন। জায়গাটি নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয় এবং খামারের মতোই প্রতিটি গরুকে খাবার সরবরাহ করা হয়। শিগগিরই পুরো হোটেল সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। হোটেলের পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।’

মানুষের আবাসিক হোটেলের মতো চেক ইন-চেক আউট ব্যবস্থা নিয়েও রয়েছে পরিকল্পনা। তিনি জানান, ‘যে সময় গরু হোটেলে প্রবেশ করবে, ঠিক তার পরের দিন একই সময়ে সেই গরুর চেক আউট হিসেবে গণ্য হবে। খাওয়াদাওয়া বুফে সিস্টেমে। প্রতিটি গরুর জন্য একটি বড় খাবার পাত্র বরাদ্দ রয়েছে, যেখানে সবসময় ঘাস, বিচালি ইত্যাদি দেওয়া থাকে। গরু যখন মন চাইবে, খাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু কোরবানির ঈদ নয়, সারা বছরই হোটেলটি চালু থাকবে। পাশে রয়েছে ডুগডুগি পশুর হাট। অনেক ব্যাপারী হাট থেকে গরু কিনে এই হোটেলে রাখছেন। এরপর অন্য হাট থেকে গরু কিনে একসঙ্গে ট্রাকে করে ঢাকায় বা অন্যান্য জেলায় নিয়ে যাচ্ছেন। হাটের কাছাকাছি হওয়ায় অনেকেই হোটেলের সুবিধা নিতে পারছেন।’

এলাকাবাসীরা জানান, হোটেলটির পরিবেশ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই ভালো। পাশেই রয়েছে প্রধান সড়ক, ফলে এখান থেকে দেশের যেকোনো প্রান্তে গরু পাঠানো সম্ভব।

হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, নতুন এই উদ্যোগে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। চাহিদা অনুযায়ী নতুন ঘর তৈরি করাও সম্ভব, পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। বর্তমানে গরুপ্রতি ২৪ ঘণ্টার জন্য ৫০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আরিফুল ইসলাম একটি চমৎকার উদ্যোগ নিয়েছেন। এর ফলে গরু ব্যবসায়ীরা উপকৃত হচ্ছেন। হাটে গরু কেনার পর সেটিকে এখানে রেখে আবার আরাম করে অন্য গরু কেনা যাচ্ছে। আশা করি, এই উদ্যোগ আরও প্রসার লাভ করবে।’