চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় সুদের টাকা আদায় করতে এক মরদেহের দাফনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মর্জিনা খাতুন নামের এক নারীর বিরুদ্ধে। অবশেষে টাকা পরিশোধ করেই দাফন করতে বাধ্য হয়েছে পরিবার।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) উপজেলার চিৎলা গ্রামের নতুনপাড়ায় ঘটনাটি ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গ্রামের বাসিন্দা হারুন মিয়া (৪৫) শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) স্ট্রোকে মারা যান। পরদিন রোববার আছরের নামাজের পর দাফনের প্রস্তুতি চলাকালে প্রতিবেশী মর্জিনা খাতুন দাবি করেন, হারুনের কাছে তার সুদের ১৫ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। টাকা না পেলে লাশ দাফন করতে দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি।
হারুনের পরিবারের সদস্যরা ও স্থানীয়রা বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করলেও মর্জিনা অনড় থাকেন। একপর্যায়ে তিনি মরদেহ গোসলেও বাধা দেন। পরে শোকাহত পরিবার বাধ্য হয়ে বিভিন্নভাবে টাকা জোগাড় করে মর্জিনাকে পরিশোধ করলে তিনি সেখান থেকে চলে যান।
ঘটনাটি গ্রামে চরম ক্ষোভের জন্ম দেয়। স্থানীয়দের একাংশ জানান, জীবনে নানা ঘটনা দেখলেও লাশ আটকে রেখে সুদের টাকা আদায়ের এমন অমানবিকতা প্রথম দেখলেন।
হারুনের চাচাতো ভাই মতিনুর ইসলাম জানান, প্রায় দেড় মাস আগে হারুন মর্জিনার কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন। সেটি ব্যবসার কাজে ব্যবহার করেন। দাফনের সময় মর্জিনা দাবি করেন, তিনি ২২ হাজার টাকা পাবেন। আমরা দাফনের পর বিষয়টি মিটমাট করার অনুরোধ করলেও তিনি বলেন, ‘টাকা না পেলে মাটি দিতে দেব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি তখন আমার গরুটি তার কাছে রেখে টাকা সংগ্রহ করে এনে ফেরত নেওয়ার প্রস্তাব দেই, সেটিও মর্জিনা মানেননি। বাধ্য হয়ে খাটিয়ার ওপর টাকা রেখে তবেই তাকে শান্ত করতে হয়।’
স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেন, মর্জিনা একজন পরিচিত সুদকারবারি। গ্রামের বহু মানুষ তার সুদের ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। কেউ প্রতিবাদ করলেই নারী নির্যাতনের মামলা দেওয়ার হুমকি দেন তিনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আতিয়ার রহমান বলেন, ‘হারুন জীবিত থাকতেই মূল টাকা পরিশোধ করেছিলেন। মৃত্যুর পর তার মরদেহ আটকে রেখে সুদের টাকা আদায় করা অত্যন্ত জঘন্য কাজ।’
দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘এ রকম একটি ঘটনা আমার জানা নেই। তবে মৃতের পরিবার যদি লিখিত অভিযোগ দেয়, আমরা অবশ্যই তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
পুরো ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা দেখার পর দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। ঘটনাটি মানুষকে চরমভাবে মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ করেছে।