ঢাকা শুক্রবার, ০৮ আগস্ট, ২০২৫

ফুলবাড়ীতে স্বস্তির বৃষ্টি, চাষিদের মুখে হাসি

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৫, ০৩:২৪ পিএম
কৃষকরা জমি প্রস্তুত করছেন। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টির অভাবে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় আমন ক্ষেত খরায় পুড়ছিল। আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বর্ষার ভরা মৌসুমেও বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে আমন চাষিদের। অবস্থাসম্পন্ন কৃষকরা ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে সেচ দিয়ে চাষাবাদ শুরু করলেও, নিম্ন ও মধ্যবিত্তসহ প্রান্তিক চাষিদের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। ফলে বীজতলায় চারা প্রস্তুত থাকলেও বৃষ্টির পানির অপেক্ষায় ছিলেন অধিকাংশ কৃষক।

আমন চাষের উপযুক্ত সময় আষাঢ়ের মাঝামাঝি থেকে শ্রাবণের শেষ পর্যন্ত হলেও, শুধুমাত্র বৃষ্টির অভাবে চারা রোপণ কার্যক্রমে বিলম্ব ঘটে।

তবে টানা খরার পর প্রতীক্ষিত স্বস্তির বৃষ্টিতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে ফুলবাড়ীর আমন চাষ। কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে জমিতে পানি জমেছে, আর কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন আমনের চারা রোপণে।

দিনাজপুর আবহাওয়া দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, ‘চলতি বছর জুলাই পর্যন্ত মোট ১,২৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ০ মিমি, ফেব্রুয়ারিতে ১৮ মিমি, মার্চে ০ মিমি, এপ্রিল মাসে ১৩৯ মিমি, মে মাসে ৩৬৩ মিমি, জুন মাসে ৩৭৮ মিমি এবং জুলাই মাসে ২৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা স্বাভাবিকের তুলনায় কম। তবে আশা করা হচ্ছে, আগস্টে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।’

তিনি আরও জানান, ‘২০২১ সালে দিনাজপুরে মোট ১,৭৫৪ মিলিমিটার, ২০২২ সালে ১,৭৩০ মিলিমিটার, ২০২৩ সালে ১,৯৫৯ মিলিমিটার এবং ২০২৪ সালে ১,৬৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।’

শুক্রবার (৮ আগস্ট) উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা জমি প্রস্তুত করছেন, কেউ আগাছা পরিষ্কার করে সার প্রয়োগ করছেন, আবার কেউ রোপণের জন্য চারা জমিতে লাগাচ্ছেন। বৃষ্টির কারণে এবার সেচ ছাড়াই কম খরচে আমন ধান চাষের স্বপ্ন দেখছেন তারা।

উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ বাসুদেবপুর গ্রামের কৃষক রাশেদুজ্জামান বাপ্পি বলেন, ‘চলতি আমন মৌসুমে ১ একর জমিতে স্বর্ণা-৫ জাতের ধান চাষ করছি। বৃষ্টি না হওয়ায় চিন্তিত ছিলাম। তবে প্রতীক্ষিত বৃষ্টি হওয়ায় চারা রোপণ শুরু করতে পেরেছি।’

একই গ্রামের কৃষক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘আমন চাষের ক্ষেত্রে বৃষ্টির পানির ওপরই কৃষকরা নির্ভর করে থাকেন। দেরিতে হলেও বৃষ্টি হওয়ায় জমিতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি জমেছে, তাই চারা রোপণের উপযোগী হয়ে উঠেছে।’

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহানুর রহমান বলেন, ‘চলতি আমন মৌসুমে ফুলবাড়ী পৌরসভাসহ ৭টি ইউনিয়নে ১৮,১৯০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃষ্টির ঘাটতির কারণে শুরুতে অনেকে চারা রোপণ করতে পারেননি। তবে শ্রাবণের মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চারা রোপণ শেষ হবে এবং লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে।’