গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় একটি ফ্যাক্টরির বিষাক্ত ধোঁয়া ও বিকট শব্দে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের সিংগারদিঘী গ্রামে অবস্থিত ‘শাহ ভূঁইয়া ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাক্টরি’র বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট ফ্যাক্টরিটি কোনো ধরনের পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষিত মহলের দাবি, এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সম্পূর্ণ অনিয়মের মধ্যেই চলে আসছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, ফ্যাক্টরির ভেতরে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারেন না, সেখানে কী তৈরি হচ্ছে। ধারণা করা হয়, এটি কোনো স্টিল বা থাই অ্যালুমিনিয়ামের কারখানা হতে পারে। এর চিমনি থেকে বের হওয়া গাঢ় কালো ধোঁয়া চোখ ও গলায় তীব্র জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে। সেই সঙ্গে বিকট শব্দে এলাকার মানুষ শান্তিতে থাকতে পারছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘কালো ধোঁয়ায় আকাশ-বাতাস অন্ধকার হয়ে যায়। ফ্যাক্টরির দক্ষিণ পাশের একটি পাইপ দিয়ে তরল বর্জ্য নির্গত হচ্ছে, যা বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে ফসলের জমিতে যাচ্ছে। এতে কৃষি ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।’
এ ফ্যাক্টরির দক্ষিণ পাশে অবস্থিত সিংগারদিঘী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী যাতায়াত করে। বিষাক্ত ধোঁয়া ও শব্দ দূষণ তাদের স্বাভাবিক পরিবেশে পড়ালেখার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে।
ফ্যাক্টরির কারণে সৃষ্টি হওয়া সমস্যার সমাধান চেয়ে সিংগারদিঘী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিটিএ কমিটির সহসভাপতি মো. জুয়েল রানা জানান, ‘আগে দিনে ধোঁয়া ছাড়ত, তখন শিশু শিক্ষার্থীদের শ্বাসকষ্ট হতো। আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ করায় এখন তারা রাতে ধোঁয়া ছাড়ে। কিন্তু রাতে আমাদের ঘুমাতে কষ্ট হয়। কালো ধোঁয়ায় চোখ জ্বলে। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ‘শাহ ভূঁইয়া ইঞ্জিনিয়ারিং’ ফ্যাক্টরির মালিক শাহ জামাল রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা এখনো ট্রায়ালে আছি, পুরোপুরি উৎপাদন শুরু করিনি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছি।’
গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আরেফিন বাদল বলেন, ‘শাহ ভূঁইয়া ইঞ্জিনিয়ারিং নামে কোনো প্রতিষ্ঠানকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। তারা আবেদন করে থাকলে সরেজমিন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার আগেই কার্যক্রম শুরু করলে তাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শ্রীপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার ব্যারিস্টার সজীব আহমেদ বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান চালানো অবৈধ। পরিবেশ অধিদপ্তর যদি অভিযান পরিচালনা করে, আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।,
আপনার মতামত লিখুন :