ঢাকা বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫

তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, পানিবন্দি কয়েক হাজার পরিবার

হাসানুজ্জামান হাসান, (কালীগঞ্জ) লালমনিরহাট
প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২৫, ১১:৫৮ পিএম
নৌকাতে করে চলাচল করছে পানিবন্দিরা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বেড়ে গিয়ে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাত ৯টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২০ মিটার, যা বিপৎসীমা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) থেকে ৫ সেন্টিমিটার বেশি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও নদীপাড়ের বাসিন্দারা জানান, গত কয়েক দিন ধরে ভারতের উজানে টানা বৃষ্টির ফলে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। ডালিয়া পয়েন্টে কয়েক দিন ধরে পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হলেও মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তা সীমা অতিক্রম করে।

তিস্তাপাড়ের হাজার হাজার পরিবার ইতোমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ। চরাঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নৌকা ও ভেলাই এখন একমাত্র বাহন। পানিতে ডুবে যাচ্ছে আমন ধানসহ নানা ধরনের ফসল, পুকুর ডুবে যাওয়ায় ভেসে যাচ্ছে চাষিদের মাছ।

লালমনিরহাটের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীতে পানি সামান্য বাড়লেই জেলার ৫টি উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো প্লাবিত হয়। এবারের উজানের ঢলের ফলে জেলার ৫টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। পানি বাড়তে থাকলে নতুন নতুন এলাকাও প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে

কালিগঞ্জে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষজন। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে জানিয়ে বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

গড্ডিমারী ইউনিয়নের বাসিন্দা শামসুল আলম বলেন, ‘উজান থেকে প্রচুর পানি আসছে। ইতোমধ্যে নিচু এলাকায় পানি ঢুকে গেছে, পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়েছে, রাস্তাঘাট ডুবে গেছে।’

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্ধন গ্রামের আব্দুর রশিদ বলেন, ‘চরাঞ্চলের কিছু কিছু বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি যেভাবে বাড়ছে, তাতে বড় বন্যার আশঙ্কা করছি।’

সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আরিফুল ইসলাম জানান, ‘সন্ধ্যার পর থেকে পানি দ্রুত বাড়ছে। আমার ইউনিয়নের প্রায় দেড় হাজার পরিবার ইতোমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সড়ক ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, ‘উজান থেকে পানি আসায় তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছি। তীরবর্তী এলাকায় মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ. এম. রকিব হায়দার জানান, নদীতীরবর্তী এলাকার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে শুকনো খাবার ও ঢেউটিন সরবরাহের জন্য প্রস্তুতি রয়েছে। সরকারিভাবে বন্যা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।