ঢাকা মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫

বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে তিস্তার পানি

কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২৫, ০২:৩১ পিএম
তিস্তা ব্যারাজ। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দুপুর ১২টায় বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এর আগে, গতকাল সোমবার রাত পর্যন্ত ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার নিচে ছিল, আজ তবে মঙ্গলবার সকাল ৬টা ও ৯টায় তা ২ সেন্টিমিটার নিচে নেমে আসে। দুপুরের মধ্যে আবার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপরে চলে যায়। ফলে নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ শুরু হয়েছে। ডালিয়া ব্যারাজে ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, ‘আগামী তিন দিন এই এলাকায় ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢল বয়ে আসতে পারে। এতে উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং স্বল্পমাত্রার বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।’

আজ মঙ্গলবার দুপুরে তিস্তা ও ধরলা নদীর অন্যান্য পয়েন্টের পানি পরিস্থিতি ছিল- কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার নিচে, ধরলা নদীর শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ৫৯ সেন্টিমিটার নিচে এবং পাটগ্রাম পয়েন্টে ২৮৩ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিশেষ করে, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গীমারি, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী ও ডাউয়াবাড়ী; কালীগঞ্জের চর ভোটমারী, শৈলমারী ও নোহালী; আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, কালমাটি, বাহাদুরপাড়া এবং সদর উপজেলার ফলিমারী, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর ও গোকুন্ডা ইউনিয়নে পানি প্রবেশ করতে পারে।

স্থানীয়রা বলছেন, পানি ওঠানামার কারণে তারা চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। পানি কমলে বাড়িতে শুকনো খড় নিয়ে যাওয়া হয়, আবার পানি বাড়লে তা সরাতে হয়। এতে গবাদি পশু পালনে সমস্যা হচ্ছে।

মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্ধন এলাকার ফয়জার আলী বলেন, ‘পানি কখনো বাড়ে, কখনো কমে। এখনো ঘরে ঢুকেনি, কিন্তু নদীর ধারে থাকা বাসায় পানি উঠছে। পানি বাড়লে আমাদের ঘরেও ঢুকবে।’

ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের ছালেহা খাতুন বলেন,  ‘বৃষ্টি তো আছেই, যদি তিস্তার পানি আরও বাড়ে, তাহলে আমাদের এলাকায় আবার বন্যা হবে। এতে আমাদের অনেক ক্ষতি হবে। আমরা ত্রাণ চাই না, এর স্থায়ী সমাধান চাই। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাচ্ছি।’

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ‘ভারতের উজানে বৃষ্টিপাতের কারণে পানি ওঠানামা করছে। বর্তমানে পানি বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’