ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট, ২০২৫

অন্তসত্ত্বাকে আটকাতে লিফট বন্ধ, সিঁড়িতে পড়ে গর্ভপাত পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২৫, ০৮:৫২ পিএম
হেলথ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতাল। ছবি- সংগৃহীত

ময়মনসিংহ নগরীর ‘হেলথ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে’ ভয়াবহ গাফিলতির ঘটনায় অন্তঃসত্ত্বা এক নারী পড়ে গিয়ে গর্ভপাতের শিকার হয়েছেন।

হাসপাতালের লিফট বন্ধ করে তাকে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে। পরে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন ওই নারী। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।

এই ঘটনায় এলাকায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) দুপুরে জেলা সিভিল সার্জন হাসপাতালটি সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করে এবং তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

একই দিন কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ হাসপাতালের মালিক পক্ষের তিনজন—অংশীদার রঞ্জন দে, মো. পাপ্পু এবং ম্যানেজার মো. মজিবুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়।

ভুক্তভোগী নারী রোজিনা আক্তার ময়মনসিংহ নগরীর ২ নম্বর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই লুৎফর হোসেনের স্ত্রী।

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২ আগস্ট রোজিনাকে জামালপুরের একটি হাসপাতাল থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। কিন্তু পথিমধ্যে মো. হান্নান নামে এক দালাল তাকে ময়মনসিংহ নগরীর ব্রাহ্মপল্লী রোডের ‘হেলথ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে’ নিয়ে আসে।

পরদিন ৩ আগস্ট সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সেখানে পৌঁছান রোজিনা। কিন্তু হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক না থাকায় তিনি আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। এরপর তিনি ক্লিনিক ত্যাগ করতে চাইলে কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের লিফট বন্ধ করে দেয়, যাতে তিনি অন্য কোনো হাসপাতালে যেতে না পারেন।

এই অবস্থায় রোজিনার স্বজনরা হুইলচেয়ারে করে তাকে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে আনতে গেলে পড়ে গিয়ে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। জরায়ুতে আঘাত পেয়ে তার গর্ভপাত হয় এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয়।

কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি মো. শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালটিতে মারাত্মক অব্যবস্থাপনা ছিল এবং এটি অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছিল। আমরা হাসপাতালের মালিক-ম্যানেজারসহ তিনজনকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছি। মামলার প্রস্তুতি চলছে।’

তিনি আরও জানান, ‘রোগীকে জোর করে আটকে রাখা এবং চিকিৎসা না দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় সিঁড়ি দিয়ে নামতে বাধ্য করার দায় মালিকপক্ষ এড়াতে পারে না।’

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. সাইফুল ইসলাম খান বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে আমরা হাসপাতালের কাগজপত্র যাচাই করেছি। প্রতিষ্ঠানটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের লাইসেন্সধারী হলেও বহু অনিয়ম ও নীতিমালাবিরোধী কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল।’

তিনি আরও জানান, ‘তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত হেলথ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতাল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

তবে তদন্ত কমিটির সদস্যদের নাম এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

হাসপাতালের আয়া সুইটি আক্তার বলেন, ‘সাবেক ম্যানেজার মো. হান্নান রোগীকে এখানে নিয়ে আসেন। তখন ডাক্তার ছিলেন না। রোগীর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। পরে স্বজনরা হুইলচেয়ারে বসিয়ে সিঁড়ি দিয়ে তাকে নিচে নামিয়ে নিয়ে যান।’

অন্তঃসত্ত্বা রোজিনার স্বামী এসআই লুৎফর হোসেন বলেন, ‘আমি রোগীর কাছে ব্যস্ত আছি, পরে কথা বলব।’ এরপর একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কেউ কোনো বক্তব্য দেয়নি। এমনকি সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়েও দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি।