সীমান্তের অতি নিকটবর্তী মাত্র ১৫০ গজ এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে ভূমির প্রকৃতিতে ভয়াবহ পরিবর্তন আসছে। যার ফলস্বরূপ আন্তর্জাতিক সীমারেখা ও সীমান্ত পিলারগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইদানীং প্রভাবশালী মহলের এই বেপরোয়া দৌরাত্ম্য দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সীমান্তের শূন্য রেখা ও আন্তর্জাতিক সীমানাকে ঝুঁকিতে ফেলে অবৈধ বালু উত্তোলন প্রভাবশালী মহল অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন (৩৯ বিজিবি) দপ্তরের মাল্টিপারপাস সেড সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদীর পাড়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি’র এই উদ্বেগের কথা জানান ব্যাটালিয়নটির অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো. মেহেদী হাসান।
সীমান্তের শূন্য রেখা ও আন্তর্জাতিক সীমানাকে ঝুঁকিতে ফেলা অবৈধ বালু উত্তোলন বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও সকলকে অবহিত করার লক্ষ্যেই এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্ণেল মো. মেহেদী হাসান জানান, অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে ইতোমধ্যে চারটি সীমান্ত পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে দু’টি পিলার বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং দু’টি পিলার ধসে পড়েছে।
তিনি আরও জানান, বরাক নদীতে ইজারাবর্হিভূত এলাকা থেকে রাতের আঁধারে কিছু কুচক্রিমহল ও অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমাণ বালু উত্তোলন করছে। এর ফলে বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড, কৃষিজমি, সীমান্ত পিলার এবং স্থানীয় জনসাধারণের বসতবাড়ি। এতে আন্তর্জাতিক সীমারেখা পরিবর্তিত হওয়াসহ নানাবিধ জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।
বিজিবি অধিনায়ক জানান, ইদানীং সীমান্তের যাটাপাড়া এলাকায় জেলা প্রশাসক কর্তৃক ইজারা দেওয়া স্থানটি (মৌজা নম্বর ১১১ বরাক ঘোষগাঁও) হলেও ইজারাদার ও অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা যোগসাজশ করে রাতের আঁধারে স্থান পরিবর্তন করছে। তারা ইজারা বহির্ভূত ১০৭ ও ১০৮ নম্বর মৌজা থেকে বালু উত্তোলন করছে, যা সীমান্তের খুবই নিকটবর্তী।
অধিনায়ক বলেন, ১০৭ এবং ১০৮ নম্বর মৌজার দুমনিকুড়া এলাকা থেকে রাতের আধারে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রেজার ব্যবহার করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে এগুলোকে ইজারাকৃত জায়গার বৈধ বালু দাবি করে অবৈধভাবে পাচার করা হচ্ছে।
অবৈধভাবে বালু পরিবহনের কারণে সীমান্ত সড়কসহ কাঁচা রাস্তাগুলো সম্পূর্ণভাবে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ট্রাক্টর ও অটোভ্যানের মাধ্যমে ব্যাপক হারে বালু পরিবহনের ফলে বর্ডার রোডের পুরো অংশেই বিভিন্ন স্থানে গর্তসহ উঁচু-নিচু খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।
বিজিবি জানায়, এর ফলে স্থানীয় জনগণ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে যাতায়াত করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া, বালু ভর্তি ট্রলি/ট্রাক্টরের আড়ালে মাদকসহ চোরাই মালামাল পাচারের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে বলেও উদ্বেগ জানানো হয়।
বিজিবি অধিনায়ক জানান, গত ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আটটি অভিযানের মাধ্যমে ২৭ হাজার ৩৩০ ঘনফুট বালু জব্দ করা হয়েছে। লক্ষাধিক ঘনফুট বালু এবং ১০০ গাড়ি জব্দ করা হলেও আইনের ফাঁকে প্রভাবশালীরা এগুলো ছাড়িয়ে নিচ্ছে। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে বিজিবি’র পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনকে লিখিত ও মৌখিকভবে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে এবং স্থায়ী সমাধানের জন্য কিছু প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।
লে. কর্ণেল মো. মেহেদী হাসান বলেন, সীমান্ত সুরক্ষা, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি বদ্ধপরিকর। স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ এবং বিজিবি'র জোর তৎপরতা যৌথ বাহিনী আকারে টাস্কফোর্স অভিযানের মাধ্যমে বলবৎ রাখতে হবে।