নড়াইল সদর উপজেলার কলোড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সাজ্জাদুল ইসলাম ব্যতিক্রমী এক উপায়ে রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেলে তিনি নিজ বাড়িতে বালতি ও গামলায় ভরা দুধ দিয়ে গোসল করে সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেন এবং রাজনীতি থেকে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন।
এ দিন স্থানীয় সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষকে নিজ বাড়িতে ডেকে এনে সাজ্জাদুল এ ঘোষণা দেন।
দুধ দিয়ে গোসল করতে করতে তিনি সংবাদমাধ্যকে জানান, ‘আমি দীর্ঘদিন নিষ্ঠার সঙ্গে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। কিন্তু দলের ভেতরে চলমান স্বেচ্ছাচারিতা ও জ্ঞানহীন নেতৃত্বের কারণে আমি বারবার মানসিক, শারীরিক, সামাজিক এবং পারিবারিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।’
তিনি আরও জানান, ‘রাজনীতির কারণে আমি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, জেল খেটেছি, এমনকি জেলে থাকাকালীন আমার পিতা মারা গেছেন। দল ক্ষমতায় থাকলেও আমি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাইনি এবং কারও কোনো ক্ষতি করিনি। অথচ সরকার পতনের পর আমার বাড়িতে হামলা হয়েছে, ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এই অবস্থায় আর রাজনীতি করা সম্ভব নয়।’
নিজের সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘মানুষের আত্মসম্মান, পারিবারিক দায়িত্ব এবং ব্যক্তিত্ব রক্ষাই একজন নাগরিকের প্রধান কর্তব্য। আমি স্বজ্ঞানে, স্বেচ্ছায় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে অব্যাহতি নিচ্ছি। আজ থেকে সংগঠনের সঙ্গে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই। শিগগিরই লিখিত পদত্যাগপত্র জমা দেব।’
সাজ্জাদুলের এই ঘোষণা ও দুধ দিয়ে গোসলের দৃশ্য দেখতে ঘটনাস্থলে ভিড় করেন স্থানীয় পথচারী ও এলাকাবাসী।
পথচারী আরাফত মোল্যা বলেন, ‘রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। দেখি, ওনি দুধ দিয়ে গোসল করছেন। পরে জানলাম ছাত্রলীগ ছেড়ে দিচ্ছেন। এমন ঘটনা জীবনে প্রথম দেখলাম।’
সাজ্জাদুলের এই সিদ্ধান্তে তার পরিবারের সদস্যরাও স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
তার ফুফু সোনিয়া বেগম বলেন, ‘দুধ দিয়ে গোসল করে আমার ভাতিজা রাজনীতি থেকে সরে এসেছে। আমরা সবদিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। গত বছর সে জেল খেটেছে, তখনই তার বাবা মারা যান। এসব কিছুই তাকে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে।’
উল্লেখ্য, সাজ্জাদুল ইসলাম ছাত্রলীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন এবং গত বছর ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক সহিংসতার মামলায় তাকে কারাবরণ করতে হয়েছিল।
আপনার মতামত লিখুন :