রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) পরীক্ষায় অংশ না নিয়েই পাস করেছেন ছাত্রলীগ নেত্রী—এমন অভিযোগের ছয় মাস পার হলেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েনি। এ নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
অভিযোগের কেন্দ্রে আছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সুরাইয়া ইয়াসমিন ঐশী। অভিযোগ, স্নাতকোত্তরের প্রথম সেমিস্টারের মিডটার্ম পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন।
ঘটনার পর ২২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত প্রতিবেদন জমা হয়নি। এতে তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষার্থীরা।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিউল ইসলাম জীবন বলেন, ‘প্রতিবেদন প্রায় প্রস্তুত। দুই-এক দিনের মধ্যেই তা জমা দেওয়া হবে।’
ঐশীর সহপাঠীরা দাবি করেছেন, তাকে মিডটার্ম পরীক্ষায় উপস্থিত দেখা যায়নি। একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় না দিয়েও কীভাবে পাশ করতে পারেন—এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি আস্থার বড় ধাক্কা বলেও মনে করছেন অনেকেই।
ঘটনার পর ঐশী শুরুতে ফোন রিসিভ না করলেও হোয়াটসঅ্যাপে দাবি করেন যে, তিনি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। তবে তার বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তব প্রমাণ মেলেনি, ফলে বিতর্ক আরও বেড়েছে।
উল্লেখ্য, ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পর পর থেকে ঐশী আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. রুহুল আমিনকে অর্থ দপ্তরের পরিচালক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বেরোবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক আমিন আল আমিন বলেন, ‘ছাত্রলীগের হামলাকারী নেত্রী কীভাবে পরীক্ষা না দিয়েই পাস করলেন? এখানে শিক্ষকেরও সম্পৃক্ততা রয়েছে। তদন্ত হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের ওপর থেকে আস্থা হারাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আগেও দেখেছি—তদন্ত কমিটি হয়, কিন্তু ফল আসে না। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আমরা আন্দোলনে যাব।’
তদন্ত প্রতিবেদন জমা না হওয়া এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাগত নৈতিকতা ও প্রশাসনিক জবাবদিহি প্রশ্নের মুখে পড়ছে।
আপনার মতামত লিখুন :