দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আগামী ৯ সেপ্টেম্বর আবারও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। আর এরই মধ্যে গোটা ক্যাম্পাসজুড়ে বইছে উৎসবের আমেজ। প্রতিটি হল, ডিপার্টমেন্ট আর ক্যাফেটেরিয়ায় চলছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। তবে উৎসবের এই আবহের মধ্যে এবার শিক্ষার্থীদের সামনে রয়েছে এক নতুন বাস্তবতা- ১২ সেকেন্ডে একটি ভোট দেওয়ার চ্যালেঞ্জ!
বর্তমান ভোটার সংখ্যা প্রায় ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৮টি পদ ও হল সংসদের ১৩টি পদ মিলিয়ে মোট ৪১টি পদে ভোট দেবেন শিক্ষার্থীরা। এসব পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ১,৫০৬ জন প্রার্থী। বিপরীতে নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা মাত্র ৮টি, এবং বুথ আছে ৭১০টি। ফলে প্রতিটি বুথে গড়ে ৫৬ জন ভোটার পড়বে, এবং প্রত্যেক ভোটারকে তার পছন্দের প্রার্থীকে খুঁজে বের করে ব্যালটে ভোট দিতে হবে গড়ে প্রতি ১২ সেকেন্ডে একটি করে।
এই হিসাবের কারণে প্রশ্ন উঠেছে- এই সময়ের মধ্যে একজন ভোটার আদৌ কতটা সচেতনভাবে, নির্ভুলভাবে ভোট দিতে পারবেন? কারণ, একটি ভোট শুধু একটি ঘর টিক দেওয়ার বিষয় নয়- প্রার্থী খোঁজা, প্রতীক শনাক্ত করা, ব্যালট বোঝা এবং সঠিকভাবে ভোট দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ।
বিশেষত সকালবেলা যখন কেন্দ্রে ভিড় বেশি থাকবে, তখন প্রতিটি সেকেন্ডই হয়ে উঠবে গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে আশঙ্কা করছেন, ভোটের শুরুর দিকে যদি বিশৃঙ্খলা হয় বা ধীরগতি দেখা দেয়, তবে লাইনের দৈর্ঘ্য বাড়বে এবং অনেক শিক্ষার্থী হয়তো ভোট দিতে না পারার ঝুঁকিতে পড়বেন। এর সঙ্গে যদি ভোটের দিন অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি বা পরিবহন সমস্যাও যুক্ত হয়, তাহলে ভোটার উপস্থিতিও ব্যাহত হতে পারে।
তবে নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী। প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ‘ভোটাররা আগে থেকেই পছন্দের প্রার্থীর নাম ও ব্যালট নম্বর জেনে রাখেন, ফলে দ্রুত ভোট দেওয়া সম্ভব।’
তিনি আরও জানান, ‘ভোটগ্রহণ চলবে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত, বিরতিহীনভাবে। এবার সময় এক ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে।’ প্রত্যাশিত ৪০ হাজার ভোটারের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সব ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। কেউ যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও কেন্দ্রে উপস্থিত না হন, কিন্তু ভোটকেন্দ্রের প্রাঙ্গণে থাকেন, তাকেও ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।
এদিকে প্রার্থীদের অনেকেই কেন্দ্রের সংখ্যা ও অবস্থান নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। প্রথমে কেন্দ্র ছিল ৬টি, পরে তা ৮টিতে বাড়ানো হলেও, তাতেও সন্তুষ্ট নন অনেকে।
অন্যদিকে নির্বাচনের পরিবেশকে অনেকেই কলুষিত করেছে বলে দাবি কিছু প্রার্থীদের। শিবির-সমর্থিত এক জিএস প্রার্থীর প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করায় এক নারী শিক্ষার্থীকে সামাজিক মাধ্যমে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠে। অভিযুক্ত ছাত্র আলী হুসেন-কে বিশ্ববিদ্যালয় ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করেছে এবং অভিযোগটি যৌন নিপীড়নবিষয়ক কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
এবারে ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে ক্লাস বন্ধ নিয়েও এসেছে পরিবর্তন। প্রথমে ৮, ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর ছুটি ঘোষণা করা হলেও পরর্বতী সেটি পরিবর্তন করে নতুন করে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র ৯ সেপ্টেম্বর ক্লাস বন্ধ থাকবে, ৮ ও ১০ সেপ্টেম্বর যথারীতি ক্লাস চলবে।