চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থীদের ওপর গ্রামবাসীর হামলার ঘটনায় দুই দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি, গ্রেপ্তারও হয়নি কেউ। প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা এবং হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিও তুলেছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় ছাত্রসংগঠনগুলো জানিয়েছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবেন না এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। আজ মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির প্রথম বৈঠকে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে রোববার রাতেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে মামলা ও আটকের বিষয়ে হাটহাজারী থানার ওসি আবু কাওসার মাহমুদ হোসেন জানান, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের হয়নি বা কাউকে আটক করা হয়নি।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগামী ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করেছিল। যদিও কোনো বিভাগ চাইলে পরীক্ষা নিতে পারবে বলে জানানো হয়। তবে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনো বিভাগেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।
পরীক্ষার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমার কাছে কোনো বিভাগের পরীক্ষা নেওয়ার তথ্য নেই।’
অধ্যাপক মমতাজ নিজেও অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। তবে ক্যাম্পাসে সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ বিভাগেই ক্লাস বন্ধ রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক মুনতাসির মাহমুদ বলেন, ‘প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী সন্ত্রাসী হামলায় আহত হয়েছেন। এই হামলার বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনো ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেবে না শিক্ষার্থীরা। বর্তমান প্রশাসনের ব্যর্থতার দায়ে তাদের পদত্যাগ চাই।’
শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে রয়েছে- স্থানীয় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা দায়ের ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার, নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় নারীবান্ধব বিশেষায়িত সেল গঠন, আহত শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ চিকিৎসা ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন করা, প্রয়োজনে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা জোরদার।
১৪৪ ধারা বলবৎ
চলমান এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গত রোববার দুপুর থেকে সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। পরে তা এক দিন বাড়িয়ে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কার্যকর রাখা হয়েছে।
গত শনিবার রাতে ও রোববার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্রামবাসীদের সংঘর্ষে অন্তত ২০০ জন শিক্ষার্থী এবং কয়েকজন গ্রামবাসী আহত হন। এই ঘটনার পর থেকেই ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
কেন এই সংঘর্ষ?
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেটের কাছে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। শনিবার রাতে তিনি দেরিতে বাসায় ফিরলে দারোয়ানের সঙ্গে কথা কাটাকাটির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে দারোয়ান শিক্ষার্থীর ওপর চড়াও হন। ২ নম্বর গেটে থাকা শিক্ষার্থীরা দারোয়ানকে ধরতে গেলে তিনি পালিয়ে যান। পরে স্থানীয়রা জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।
শিক্ষার্থীরাও সোহরাওয়ার্দী হলের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে জড়ো হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, ‘আমি সময়মতো বাসায় ফিরেছিলাম। দরজা খোলার জন্য দারোয়ানকে অনুরোধ করলে তিনি অকথ্য ভাষায় কথা বলেন এবং হঠাৎ চড় মারেন। আমার রুমমেটরা নামলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। আমি আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে স্থানীয়রা এগিয়ে আসে।’