ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫

ছাত্রের গোসলরত অবস্থায় ভিডিও ধারণ, দোষীর শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ

চুয়েট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২৫, ১১:৫৯ এএম
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে গোসলরত অবস্থায় আরেক শিক্ষার্থীর ভিডিও ধারণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী চুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৌম্য দাস।

জানা গেছে, গত ১৪ অক্টোবর (মঙ্গলবার) মুক্তিযোদ্ধা হলের এস ব্লকের ৫ম তলার গোসলখানায় ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী গোসলরত অবস্থায় ছিলেন। সে সময় সৌম্য দাস পাশের বাথরুম থেকে ভিডিও ধারণ করে। গোসলরত শিক্ষার্থী উপরে তাকালে সৌম্যের হাতে মোবাইল ফোন দেখতে পান এবং তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি যখন তাকে ভিডিও করতে দেখি, তখন ও পাশের বাথরুমে ছিল। আমি সাথে সাথে বের হয়ে তার দরজা ধাক্কাতে থাকি। তার দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। একটু পর সে দরজা খুললে আমি তার ফোন কেড়ে নিই ও তাকে ধরে আমার রুমের সামনে নিয়ে যাই। সেখান থেকে আমরা হলের বড় ভাইদের বিষয়টি অবহিত করি।’

প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে সৌম্য ঘটনা অস্বীকার করে। তবে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা তার মোবাইল পরীক্ষা করে গুগল ড্রাইভে ভিডিওটির ১০টি কপি পান। এরপর তাকে মুক্তিযোদ্ধা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. বিপুল চন্দ্র মণ্ডলের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

তদন্তে আরও জানা যায়, সৌম্যের টেলিগ্রাম অ্যাপে একাধিক অশালীন, সমকামী ও শয়তান উপাসনাসংক্রান্ত গ্রুপের সাথে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে চুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মাহাদি রাব্বানি বলেন, আমরা তার মোবাইল অনুসন্ধান করলে দেখতে পাই, সে সমকামিতাসংক্রান্ত গ্রুপের সাথে জড়িত এবং অনেক গ্রুপের এডমিন সে নিজেই। পাশাপাশি সে শয়তান উপাসনার গ্রুপেও যুক্ত ছিল।

ঘটনার পর সৌম্যকে তার নিজ হল শহীদ তারেক হুদা হলের তৎকালীন প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. নিপু কুমার দাসের কাছে সোপর্দ করা হয়। প্রভোস্ট তার মোবাইল জব্দ করে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে বাসায় পাঠান।

অধ্যাপক নিপু কুমার দাস বলেন, আমার আসলে শেষ দিন ছিল প্রভোস্ট হিসেবে। ঘটনাটি ঘটার পর আমি ওই শিক্ষার্থীকে নিয়ে আসি। জানতে পারি, সে আমার হলে সংযুক্ত অবস্থায় ছিল। তার বাসা চট্টগ্রাম শহরে। তাকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ও তার মোবাইল জব্দ করা হয়। আমার দায়িত্ব হস্তান্তরের পরেও আমি ঘটনা সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি।

শহীদ তারেক হুদা হলের বর্তমান প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. রাশিদুল হাসান বলেন, ঘটনাটি আগের প্রভোস্টের সময়কার। তাই তিনিই এ সম্পর্কে ভালো বলতে পারবেন। তবে এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ শিগগিরই ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তর থেকে গ্রহণ করা হবে।

অভিযুক্ত শিক্ষার্থী সৌম্যের সাথে কথা বললে সে তার ওপর প্রদত্ত সব অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে এবং বলে, ‘আমি মোবাইলটা উপরে রেখেছিলাম এবং হয়তো পানি বা ঘাম লেগে ভিডিও অন হয়ে গেছে। আমি ইচ্ছাকৃত করিনি।’ তার মোবাইলে প্রাপ্ত প্রমাণাদির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে সে উত্তর না দিয়েই ফোন কেটে দেয় ও মোবাইল বন্ধ করে ফেলে। 

উল্লেখিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ ২৩ অক্টোবর রাত ১২টায় সৌম্যের বিচারের ৩ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল শেষে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের মাহদী রব্বানী প্রশাসনের কাছে ৩ দফা দাবি পেশ করেন। তার পেশকৃত দাবিগুলো হলো-

১. কালপ্রিটের ফোনের ফরেনসিক টেস্ট করাতে হবে।

২. ওর ছাত্রত্ব বাতিল ও আজীবন বহিষ্কার করতে হবে।

৩. চুয়েট প্রশাসনকে বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে এবং এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

এ ছাড়া বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা সৌম্যকে চুয়েট ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত বলে ঘোষণা করেন।

শিক্ষার্থীর আরও বলেন, সে একজন যৌন নিপীড়ক, অশ্লীল ভিডিও ধারণ, সম্প্রচার ও বিতরণের সাথে জড়িত যেগুলো প্রত্যেকটির জন্যই আইন কঠোর। এ ধরনের অন্যায় অশ্লীল কাজে জড়িতদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।