প্রযুক্তিনির্ভর উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কারিগরি শিক্ষাকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়ার দাবি জানিয়ে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন দেশের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ কর্মসূচি শুরু হয়। অবরোধের ফলে এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় এবং সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে ওঠে।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে কারিগরি শিক্ষাকে অবহেলা করা হচ্ছে। প্রকৌশল পেশায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের সুযোগ সীমিত করে ফেলা হচ্ছে এবং তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি বা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। এরই প্রতিবাদে তারা রাজপথে নেমেছেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীরা সাত দফা প্রধান দাবি তুলে ধরেন। এ দফাগুলো হলো- দশম গ্রেডভুক্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদ শুধুমাত্র পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সংরক্ষণ, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে বিএসসি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের অনুপাত ১:৫ নির্ধারণ এবং উপ-সহকারী প্রকৌশলী থেকে সহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির হার ৩৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা।
তাদের আরও দাবি, প্রকৌশলীদের কারিগরি ক্যাডার ছাড়া অন্য কোনো ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি শিক্ষা কার্যক্রম আধুনিকায়নের পাশাপাশি ল্যাব ও ওয়ার্কশপে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের অনুপাত ১:১২ করতে হবে এবং শিক্ষক সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। বেসরকারি ও ভোকেশনাল শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি সুযোগ-সুবিধাও সমানভাবে নিশ্চিত করা।
শুধু তাই নয়, আন্দোলনকারীরা আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি উপস্থাপন করেছেন। তারা বলেন, হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল হওয়া ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ ও পদোন্নতি সম্পূর্ণভাবে বাতিল করতে হবে। ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে বয়সসীমাহীন ভর্তি বন্ধ করে উন্নতমানের চার বছর মেয়াদি কারিকুলাম চালু করতে হবে। একই সঙ্গে ধাপে ধাপে ইংরেজি মাধ্যমে পাঠদান শুরু করার আহ্বান জানান তারা।
শিক্ষার্থীরা কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে একটি স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়’ গঠনের দাবি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন, উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁওয়ে নির্মাণাধীন প্রকৌশল কলেজগুলোর অস্থায়ী ক্যাম্পাস চালু করে ভর্তি নিশ্চিত করারও দাবি জানানো হয়েছে।
অবরোধ চলাকালে সাতরাস্তা ও আশপাশের এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়েন অফিসগামী মানুষসহ সাধারণ যাত্রীরা। অনেককেই হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা যায়।
এদিকে, কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে একযোগে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন