বাংলাদেশে জেলা প্রশাসক বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ইতিহাস ব্রিটিশ শাসনামল থেকে শুরু হয়ে আধুনিক প্রশাসনিক কাঠামো পর্যন্ত বিস্তৃত। ১৭৭২ সালে ব্রিটিশ গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলাকে ২৩টি জেলায় ভাগ করে প্রথম ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর পদ সৃষ্টি করেন। ১৮২১ সালে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার ক্ষমতা অর্পণ করা হয়, যা জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সঙ্গে জড়িত।
পাকিস্তান আমলে জেলা প্রশাসনের কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য ডেপুটি কমিশনার পদ চালু করা হয়। ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পদ গঠিত হলেও জেলার সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলার মূল দায়িত্ব এখনও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ওপরই অর্পিত।
জেলা প্রশাসক বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একাধিক দায়িত্ব বহন করেন। তিনি জেলা প্রশাসক, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা কালেক্টর ও ডেপুটি কমিশনার হিসেবে একই সঙ্গে কাজ করেন। এ পদে থাকা কর্মকর্তা জেলার আইনশৃঙ্খলা, ভূমি প্রশাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সমন্বয়, সাধারণ ও স্থানীয় নির্বাচন, সরকারি নীতি বাস্তবায়ন এবং জেলা পর্যায়ে সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যক্রমের সাধারণ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করেন।
জেলা প্রশাসক জাতীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে জেলায় গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করেন। তিনি জেলা পর্যায়ে ২০০টির বেশি কমিটির সভাপতি হিসেবে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন এবং সরকারের নিকট জেলা পর্যায়ের অবস্থা সম্পর্কিত গোপনীয় প্রতিবেদন প্রেরণ করেন।
জেলা প্রশাসনের এই বিশাল কাঠামোর কাজের সিংহভাগ সম্পন্ন করেন অফিস সহকারীরা। তারা পত্র প্রক্রিয়াকরণ, তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ, নোট উপস্থাপন ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে জেলা প্রশাসকের সহায়ক হিসেবে কাজ করেন। অফিস সহকারীরা প্রশাসনে নিযুক্ত হওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশে বুদ্ধিমত্তা, মেধা ও শ্রম দিয়ে কার্যসম্পাদন করেন। এদের কাজের পরিধি ও দক্ষতা কম্পিউটার, ইন্টারনেট ব্যবহার এবং প্রশাসনিক বিধি-বিধান সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধির মাধ্যমে আরও সমৃদ্ধ হয়। জেলার অগ্রগতি এবং প্রশাসনিক ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য সহকারীরা নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
কম্পিউটারভিত্তিক প্রশাসন কার্যকর হওয়ার পর ২০১০ সালের ৫ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অফিস সহকারী-কাম-মুদ্রাক্ষরিক পদকে অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে রূপান্তর করেন এবং কম্পিউটার পরিচালনার দক্ষতা পরীক্ষার মাধ্যমে টাইপিং ইনক্রিমেন্ট প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে সহকারীগণ কম্পিউটার অপারেটর গ্রেড দাবি করলে প্রজ্ঞাপন বাতিল হয়ে পুনরায় অফিস সহকারী-কাম-মুদ্রাক্ষরিক পদ বহাল রাখা হয়। ফলে সহকারীরা দীর্ঘকাল একই পদে থেকে অবসর গ্রহণ করছেন।
প্রশাসন ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদ কেবিনেট সচিব হলেও, অফিস সহকারীরা ১৬ নম্বর গ্রেডে নিয়োগ পেয়ে ২৫–৩০ বছর চাকরি শেষে উপ-সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি পান। এ পদোন্নতিতে আর্থিক, সামাজিক ও পদমর্যাদার স্বীকৃতি না থাকার কারণে বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতি (বাকাসস) ২০১৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে এই বৈষম্য দূর করার জন্য।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০২১ সালের ৩১ মার্চ ৮টি পদ একত্রিত করে ‘সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা’ পদে রূপান্তরের প্রজ্ঞাপন জারি করে। তবে পরের বছর ১৬ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদারের আপত্তির পর একই পদ তিন ভাগে বিভক্ত করে পুনর্বিন্যাস করা হয়। এতে অফিস সহকারীদের মধ্যে নতুন বৈষম্য সৃষ্টি হয়। বাকাসস এ অবস্থার সমাধান চেয়ে পুনরায় সরকারি স্মারকলিপি ও আবেদন প্রদান করেছেন। এছাড়া ২০১০ সালের ৫ মে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদকে পূর্বাবস্থায় বহাল রাখার প্রার্থনাও করা হয়েছে।
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জেলা প্রশাসন ও অফিস সহকারীদের পদ, দায়িত্ব ও দাপ্তরিক কাঠামোর বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান প্রশাসনিক জটিলতা এবং বৈষম্য দূর করার জন্য সমন্বয় ও পুনর্বিন্যাস দাবি করা হচ্ছে। সভাপতি/ আহ্বায়ক এস. এম. আরিফ হোসেন এবং মহাসচিব মোহাম্মদ আশ্রাফুল ইসলাম বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতির পক্ষ থেকে এই আবেদন ও প্রার্থনা করেন।