সোমবার, ২১ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বাসস

প্রকাশিত: জুলাই ২১, ২০২৫, ০২:১১ পিএম

মনে হয় এখনও রক্তাক্ত রাজপথে দাঁড়িয়ে আছি : নীরব হাসান সুজন 

বাসস

প্রকাশিত: জুলাই ২১, ২০২৫, ০২:১১ পিএম

নীরব হাসান সুজন। ছবি- সংগৃহীত

নীরব হাসান সুজন। ছবি- সংগৃহীত

জুলাই গণআন্দোলন আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বেদনাদায়ক ঘটনা। সহযোদ্ধাদের রক্তাক্ত দেহ দেখেছি। তাদের আর্তনাদ এখনো কানে বাজে। আজও রাতে ঘুমাতে কষ্ট হয়। মনে হয় আমি এখনো সেই রক্তাক্ত রাজপথে দাঁড়িয়ে আছি। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই অনুভূতি ব্যক্ত করেন ২০২৪-এর জুলাইয়ে ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় সংগঠক নীরব হাসান সুজন। 

মো. সুজন মিয়া যিনি নীরব হাসান সুজন নামে পরিচিত। তিতুমীর কলেজের ইসলামিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী নীরব হাসান সুজন ছিলেন জুলাই ২০২৪-এর ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলনের একজন সক্রিয় সংগঠক। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বড়ভাগ গ্রামের এই তরুণ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির একজন ছাত্র নেতা। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ক্যাম্পাস গুলোতে ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলার, অত্যাচার, বিরোধীদলীয় মত দমনে যে ঘৃণ্য রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করে ছিলো, তার বিরুদ্ধে সব সময় তিনি প্রতিবাদ করেছিলেন এবং কলেজ ক্যাম্পাসে অনেকবার ছাত্রলীগ কতৃক হামলার স্বীকার হয়েছিলেন।

সেই প্রতিবাদের জায়গায় থেকে জুলাই আন্দোলনের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলনে প্রথম সারিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

তিনি ইন্টারনেট বন্ধ থাকা সত্ত্বেও বাটন ফোন ও অফলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের সংগঠিত করছেন। তিনি ব্যক্তিগত মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে কর্মসূচি ছড়িয়ে দিতেন। শিক্ষকসমাজ থেকে খুব কমই সহানুভূতি পেলেও তারা ছাত্র অধিকার পরিষদ এবং কিছু জাতীয় রাজনৈতিক ছাত্র নেতার কাছ থেকে দিকনির্দেশনা ও সহযোগিতা পান এই তরুণ। 

সেই সময় ব্যক্তিগত জীবনে পরিবার নিয়ে হুমকির মুখে পড়লেও তিনি আন্দোলন থেকে একচুলও সরেননি। নতুন প্রজন্মের প্রতি তার আহ্বান কোনোভাবেই যেন ফ্যাসিবাদ আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।

সম্প্রতি তিনি বাসসের সাথে সাক্ষাৎকারে জুলাই আন্দোলনের স্মতিচারণ করেন।

বাসস : জুলাই আন্দোলনের এক বছর পূর্ণ হলো। সেই সময়কার ঘটনাগুলো এখনো মনে পড়ে কী ?

নীরব হাসান সুজন: অবশ্যই মনে পড়ে। আমি মনে করি, আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বেদনাদায়ক সময় ছিল সেটা। সহযোদ্ধাদের রক্তাক্ত দেহ দেখেছি।

তাদের আর্তনাদ এখনো কানে বাজে। 

আজও রাতে ঘুমাতে কষ্ট হয়। মনে হয় আমি এখনো সেই রক্তাক্ত রাজপথে দাঁড়িয়ে আছি। এখনো মনে হয় আন্দোলন চলছে। জুলাই আমাদের দেশের জন্য জীবন দিতেও পিছ-পা না হওয়ার শিক্ষা দিয়েছে। 

বাসস: জুলাই আন্দোলনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছিল ?

নীরব হাসান সুজন : ৫ জুন, ২০২৪ সালে আদালতের এক রায়ে ২০১৮ সালের কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দেয়। আমরা মনে করলাম এটা শুধু একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয় এটা ছাত্রদের সঙ্গে সরাসরি বিশ্বাসঘাতকতা। তখন থেকেই আমাদের আন্দোলন শুরু হয়। 

বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যোগ দিতে শুরু করে, আমরাও তিতুমীর কলেজ থেকে যুক্ত হই। ৫ জুন আমরা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে কোটার প্রতিবাদে দাঁড়িয়ে ছিলাম এবং আমরা আহবান জানিয়ে ছিলাম  ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল করে কোটা যৌক্তিক সংস্কার করা হোক। 

পরবর্তীতে ধীরে ধীরে আমাদের আন্দোলন বিশাল আকার ধারণ করে। সকল শ্রেণী-পেশার লোক এই আন্দোলনে সামিল হয়েছে। 

রিকশা চালক, সিএনজি ড্রাইভার, সাধারণ জনতা আমাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে আন্দোলনে আমাদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছে।

বাসস: কোটা সংস্কার আন্দোলন কীভাবে ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয় ?

নীরব হাসান সুজন : শুরুতে আমাদের একটাই দাবি ছিল, বিগত ২০১৮ সালের সংস্কারকৃত কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে হবে। কিন্তু সরকার তখন টালবাহানা শুরু করে দেয়। আমরা ৯ জুন নীলক্ষেতে সাত কলেজকে নিয়ে প্রথম সম্মিলিত কর্মসূচি দেই। এরপর ৬ জুলাই থেকে শুরু হয় ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে পরিচিত কর্মসূচিতে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে অংশগ্রহণ করি। ৮ জুলাই ‘বাংলা ব্লকেডে’ আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয় ফার্মগেট এলাকা ব্লক করার জন্য। আমরা সেখানে গেলে তেজগাঁও থানার ও তেজগাঁও কলেজের ছাত্রলীগের ছেলেরা আমাদের উপর হামলা করে আমাদের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলতে চায় ও হত্যার হুমকি দেয়। তাদের সাথে ধস্তাধস্তিতে আমাদের বেশ কয়েকজন আহত হয়। আমাদের সহযোদ্ধা নেওয়াজ খান ভাইয়ের কাপড় টান দিয়ে তারা ছিঁড়ে ফেলে। পুলিশ আমাদের উপর চড়াও হয়, আমরা তখন সেখান থেকে শাহবাগ চলে আসি এবং নাহিদ ইসলাম ভাই, রিফাত রশিদ ভাই ও আসিফ মাহমুদ ভাইকে বিষয়টি জানালে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলকে আমাদের সাহায্য করার জন্য পাঠান।

এরপর আমরা সবাই মিলে ফার্মগেট এলাকা ব্লক করে রাখি। 

১০ তারিখ আমরা মহাখালী রেললাইন, রাস্তা ও ফ্লাইওভার ব্লক করি। এটির মাধ্যমে আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারকে বার্তা দেয় যে, যদি আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে না নেওয়া হয় আমরা আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেবো। 

১৪ জুলাই পর্যন্ত চলতে থাকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। কিন্তু ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একইভাবে হামলা হয়। 

অনেক সহযোদ্ধা মারাত্মকভাবে আহত হন, কেউ কেউ শহীদও হন। সেই রাতেই আমরা সিদ্ধান্ত নিই এই সরকার জনগণের প্রতিনিধি নয়, এই সরকার খুনি। এই সরকার আমাদের কথা বলে না, এরা নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে চায়। ১৬ জুলাই মহাখালী রেললাইন ব্লকেডে পুলিশ আমাদের উপর টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেডের এবং লাইভ এমুনেশন চালায়। এতে আমাদের অনেক সহযোদ্ধা গুরুতর আহত হয়। 

বাসস : আপনারা কীভাবে তিতুমীর কলেজ থেকে আন্দোলন শুরু করেন ?

নীরব হাসান সুজন : প্রথমে আমাদের কলেজের ফেসবুক গ্রুপে আমরা পোস্ট দিতাম। কিন্তু বেশিরভাগ পোস্ট এপ্রুভ হতো না কোন এক অজানা কারণে। তখন ব্যক্তিগত মেসেঞ্জারে খুঁজে খুঁজে নিতাম, কারা আন্দোলনের পক্ষে কথা বলছে। তাদের সাথে যোগাযোগ করে কর্মসূচি সম্পর্কে সবাইকে জানাতাম। ধীরে ধীরে আমরা একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি সুসংগঠিত দল গড়ে তুলি। এরপর থেকে তিতুমীর কলেজের ব্যানারে নিয়মিত কর্মসূচি চালিয়ে যাই আমরা। 

বাসস: আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনসাধারণের সাড়া কেমন ছিল ?

নীরব হাসান সুজন : আন্দোলন শুরু হয়েছিল শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় নিয়ে কিন্তু দমনপীড়ন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই আন্দোলন হয়ে ওঠে ছাত্র-জনতার আন্দোলন বা গণ মানুষের আন্দোলনে। পাড়া-মহল্লার সাধারণ মানুষ, দোকানি, রিকশাওয়ালা, শ্রমিক, দিন মজুর এমনকি বৃদ্ধরাও আমাদের পক্ষে কথা বলতে শুরু করেন। রাস্তায় মানুষ দাঁড়িয়ে থেকে খাবার, পানি দিতেন এবং অনুপ্রেরণা দিতেন। একসময় ছাত্রদের দাবি হয়ে ওঠে সাধারণ জনগণের দাবি। 

বাসস: আন্দোলনকে ধারাবাহিকভাবে কীভাবে টিকিয়ে রাখলেন আপনারা ?

নীরব হাসান সুজন : আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম যদি প্রথম সারির নেতাদের কেউ গ্রেফতার হয়, তাহলে যেন নেতৃত্ব থেমে না যায়। এজন্য দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের নেতৃত্ব গড়ে তোলা হয়। 

নিয়মিত আমাদের অনলাইন মিটিং হতো। সবার দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হতো কে কোথায় যাবে, কোন কর্মসূচিতে কার দায়িত্ব কি থাকবে। ১ আগস্ট ৩৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দেওয়া হয়, এতে আমাদের অজান্তেই কেন্দ্র থেকে ৮ জনের নাম যুক্ত করে দেওয়া হয়। যাদের সাথে আমাদের সরাসরি কোন যোগাযোগ ছিলো না। পরবর্তীতে পুলিশ ২ জনকে গ্রেপ্তার করে গুম করে রাখে। বাকি সদস্যরা তখন আন্দোলন বেগবান করাতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন। 

বাসস: আন্দোলনে আপনাদের কলেজের শিক্ষকদের ভূমিকা কেমন ছিল ?

নীরব হাসান সুজন : দুই একজন শিক্ষক নীরবে আমাদের প্রতি সহানুভূতি দেখালেও প্রকাশ্যে কেউ আমাদের সামনে আসেননি। তারা হয়তো ভয় পেতেন, অথবা চাপে ছিলেন। তবে সত্যি বলতে শিক্ষক সমাজ থেকে তেমন কোনো কার্যকর সহযোগিতা আমরা আমাদের আন্দোলনে পাইনি।

বাসস: আপনারা অন্যান্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কীভাবে যোগাযোগ করতেন ?

নীরব হাসান সুজন : আমরা স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি, স্কলার্স বিশ্ববিদ্যালয়, শাহীন কলেজ ও বনানী এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতাম।

অনলাইনে গ্রুপ তৈরি করে বা সরাসরি যোগাযোগ করে কর্মসূচি সমন্বয় করতাম। সবাই যেন একই দিনে, একই দাবি নিয়ে মাঠে নামে এটা নিশ্চিত করা হতো। এছাড়াও পথশিশু, রিকশাওয়ালাও আমাদের সাথে আন্দোলনে যোগ দিতো।

বাসস: আন্দোলনের সময় ব্যক্তিগত বা পারিবারিকভাবে আপনি কোনো হুমকির মুখে পড়েছিলেন কিনা ?

নীরব হাসান সুজন : অবশ্যই। ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে আমার পরিবার এবং আমি ব্যাক্তিগত ভাবে হুমকির মুখে পড়ি। একাধিকবার অজানা ফোন নাম্বার থেকে ফোনে হুমকি এসেছে। 

পরিবার নিয়ে ভয়ে থাকতাম, তবুও পিছু হটিনি। মা অনেক কেঁদেছেন, বলতেন বাড়ি চলে আয়। কিন্তু আমি জানতাম, এই আন্দোলন থেকে সরে আসা মানেই অন্যায়ের কাছে আমাদের মাথা নত করা। ২০ তারিখের পর গুলি চলে ২১ অথবা ২২ তারিখের দিকে ২ দিন আমার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকে তখন পরিবারের কারো সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি তখন বাবা-মা মনে করেছিলো আমি শহীদ হয়েছি এবং তারা বিভিন্ন ভাবে আমার লাশ খুঁজতে বের হয়েছিলেন। 

বাসস: আপনাদের সাথে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের কীভাবে যোগাযোগ হতো ?

নীরব হাসান সুজন : প্রথমদিকে আমি কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ এবং রিফাত রশিদের সাথে যোগাযোগ করতাম। তারা আমাদের আন্দোলনের বিভিন্ন খবর ও নির্দেশনা দিতেন। পরে ৮ জুলাই ৬৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি প্রকাশিত হলে আমি কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক হিসাবে যুক্ত হই। এরপর সমন্বয়ক আরো আরও সংগঠিত হয়। এতে সারাদেশে আন্দোলন আরো বেগবান হয়।

বাসস: আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বন্ধ থাকা অবস্থায় কীভাবে সকলের সাথে যোগাযোগ করতেন ?

নীরব হাসান সুজন : ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ায় আমাদের জন্য অনেক সমস্যা হতো। তখন আমরা বাটন ফোনে মেসেজ আদান-প্রদান করতাম। একই রুমে পাঁচ-সাতজন থাকতাম, সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিতাম, কখন কে কোথায় যাব। রাতে মেসেজ পাঠিয়ে অন্যদের সেইফ জায়গায় জড়ো করতাম। তখন গ্রেফতারের ভয় থাকলেও আমাদের কাজ থেমে থাকেনি। মৃত্যু ভয় আমাদের ভাইদের রক্তাক্ত দাবি থেকে দূরে রাখতে পারেনি। যেকোন সময় যেকোন কিছু হতে পারে জেনেও আমরা কোথাও পালিয়ে যাইনি।

রাজপথে ছিলাম তাতে আমরা খুনি ফ্যাসিস্ট সরকারকে দেশ ছাড়া করেছি।

বাসস: আন্দোলনে কোনো ছাত্র সংগঠন আপনাদের সহায়তা করেছে কিনা ?

নীরব হাসান সুজন : বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নেওয়াজ খান বাপ্পি ভাই আমাদেরকে নিয়মিত তথ্য ও দিক-নির্দেশনা দিতেন। তার মাধ্যমেই ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর ভাইয়ের সাথেও যোগাযোগ হতো। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আরিফুল ইসলাম এমদাদ ও আরিফুল মোল্লার সাথেও আন্দোলনের বিভিন্ন বিষয় ও কৌশল নিয়ে আমাদের আলোচনা হতো।

বাসস : আন্দোলন আপনার ক্যাম্পাসের কেউ শহীদ বা আহত হয়েছিলো কিনা ? 

নীরব হাসান সুজন : আমাদের তিতুমীর কলেজ থেকে ১৮ জুলাই রাতে পুলিশের গুলিতে আমাদের মামুন ভাই শহীদ হন। এছাড়াও আমাদের অনেকেই পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে চরম নির্যাতনের মুখোমুখি হন। ১৫ জুলাই থেকে ৫ই আগস্ট পর্যন্ত আমাদের প্রায় ২০০ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছিল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কামরুজ্জামান ও ইউসুফ এই দুই জনকে ছাত্রলীগের তিতুমীর কলেজে সভাপতি রিপন ও জুয়েলের নির্দেশে দিনভর নির্যাতন করে সন্ধ্যায় পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

এছাড়াও আমি সহ তিতুমীর কলেজের বর্তমান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব সাখাওয়াত হোসেন, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি আফতাব মাহমুদ, আল নোমান নীরব, সিনথিয়া সুমাইয়া, আসমানী খাতুন, সুমনা, সহ অনেকেই ১৫ জুলাই টিএসসিতে গুরুতর আহত হই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তখন রক্ষক না হয়ে ভক্ষকের রূপে আবির্ভূত হয়েছিল। শিক্ষার্থী সন্দেহ হলেই তারা গ্রেফতার করতো এবং থানায় নিয়ে চরম নির্যাতন করত। ছোট ছোট বাচ্চাদের ওপর গুলি চালাতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও লীগের সন্ত্রাসীদের হাত কাঁপে নাই।

বাসস: বর্তমান নতুন বাংলাদেশের তরুণ সমাজের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী ?

নীরব হাসান সুজন : আমাদের প্রত্যাশা ফ্যাসিবাদ যেন আর কখনো এদেশে মাথাচাড়া না দেয়। ১৯৪৭ এর দেশ ভাগ, ১৯৭১ স্বাধীনতা সংগ্রাম, এবং ১৯৯০ এর গণ-অভ্যুথান যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে হয়েছিলো। 

সাম্য ও মানবিক মর্যাদা, ন্যায় বিচার, সমান অধিকার তা আমাদের দেশের মানুষ কখনো পায়নি। 

জনতাকে সবসময় সব রাজনৈতিক দলের স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা চাই এই অচল অবস্থার দেওয়াল ভেঙে যাক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিরা দেশ এবং জনগণের বন্ধু হয়ে উঠুক। 

তরুণরা যেন ভীতি, লোভ লালসার ঊর্ধ্বে উঠে দেশ গঠনে অংশ নেয়। নতুন বাংলাদেশে যেন কেউ আর ‘শেখ হাসিনা’ হয়ে উঠতে না পারে। যদি কেউ ফ্যাসিস্ট আচরণ করে, তাহলে আমরা তরুণ সমাজ তাদেরকে প্রতিহত করবো। আমরা চাই, বিগত ৫০-৫৫ বছরে যা হয়নি, সেটা যেন নতুন বাংলাদেশে শুরু হয়। সত্যিকারের গণতন্ত্র, মানবিকতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে গড়ে উঠুক নতুন প্রজন্মের স্বপ্নের দেশ।

Shera Lather
Link copied!