দেশের বৃহত্তম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির উপাচার্য এ এস এম আমানুল্লাহ। তিনি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৃত অর্থে শিক্ষার্থী তৈরি করছে না, বরং কেবল পরীক্ষার্থী তৈরি করছে, যাদের জ্ঞান ও দক্ষতার চেয়ে নম্বর পাওয়ার প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার প্রবণতাই বেশি।
রোববার (১০ আগস্ট) সকালে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৩৬৫ দিন’ শীর্ষক সংলাপে এই কথা বলেন তিনি।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে উপাচার্য জানান, সম্প্রতি ঢাকার একটি কলেজ পরিদর্শনের সময় তিনি দেখতে পান, পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে উত্তর লিখছে, অথচ কলেজের প্রিন্সিপাল পাশে বসে নিশ্চিন্তে চা খাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিকে ভয়াবহ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দায়িত্বশীল শিক্ষক খুঁজে পাওয়া এখন দুষ্কর।’
এম আমানুল্লাহ বলেন, পাঠ্যক্রম এবং মূল্যায়ন পদ্ধতির সঙ্গে বাস্তব কর্মজগৎ বা শিল্পক্ষেত্রের মিল নেই বললেই চলে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দুর্বলতার কথা তুলে ধরে তিনি জানান, এখানে অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকের বিষয়ভিত্তিক দায়িত্ব ঠিকভাবে অনুসরণ করা হয় না। যেমন, পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক দর্শনের নম্বর দেন। আবার ল্যাব না থাকা সত্ত্বেও কিছু কলেজে রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞানের পরীক্ষায় পূর্ণ নম্বর (১০০) দেওয়া হয়। এমনকি যেসব কলেজে ল্যাব আছে, সেখানেও কার্যক্রম প্রায় নেই।
তিনি আরও বলেন, বড় কোম্পানিগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের নিয়োগ দিলেও তাদের দক্ষতা ও উচ্চাভিলাষ কম থাকে। ফলে তাদের সহজে প্রভাবিত করা যায় এবং দীর্ঘ সময় ধরে কাজে লাগানো সম্ভব হয়।
সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের নৌ পরিবহণ উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।