ঢাকা শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫

সরকারের এক সিদ্ধান্তে বেকার হবে ট্রাভেল এজেন্সির লাখো কর্মী

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ০৬:৪৯ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধনের প্রস্তাবিত নতুন খসড়া অধ্যাদেশ-২০২৫ বাতিলের দাবি জানিয়েছে এ খাতের সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছে, এই আইন বাস্তবায়নের দিনই ট্রাভেল এজেন্সি, হজ এজেন্সি এবং রিক্রুটিং এজেন্সির প্রায় খাতের লাখ লাখ দক্ষ জনবল একদিনে বেকার হয়ে যাবে।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর পল্টনের একটি হোটেলে ট্রাভেল এজেন্সি, হজ এজেন্সি ও রিক্রুটিং এজেন্সির পক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন আটাবের সাবেক সভাপতি এস এন মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুব।

মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুব বলেন, অধ্যাদেশটি কার্যকর হলে দেশের প্রায় ৬ হাজার ট্রাভেল এজেন্সি, ১৪০০ হজ এজেন্সি এবং ২৭০০ রিক্রুটিং এজেন্সি সরাসরি ঝুঁকিতে পড়বে। কারন নতুন অধ্যাদেশে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা পরিচালনার এজেন্সিকে আয়াটার টিকেট সেলিং প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হতে হবে। অথচ দেশে বর্তমানে প্রায় ৬ হাজার লাইসেন্সধারী ট্রাভেল এজেন্সি থাকলেও এর মধ্যে মাত্র ১ হাজারের মতো এজেন্সির আয়াটায় যুক্ত। ফলে নতুন অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন হওয়ার দিনই বাকি ট্রাভেল এজেন্সিগুলো কার্যত ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হবে। তাদের ওপর নির্ভরশীল এজেন্সিগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে। এতে ট্রাভেল এজেন্সি, হজ এজেন্সি ও রিক্রুটিং এজেন্সির লাখ লাখ দক্ষ জনবল বেকার হবে।

নতুন অধ্যাদেশে এমন সব ধারা সংযোজন করা হয়েছে যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য অযৌক্তিক চাপ সৃষ্টি করবে। এর মধ্যে রয়েছে পরিবারের সদস্যদের তথ্যাদি দাখিল বাধ্যতামূলক করা, ঋণসংক্রান্ত সিআইবি অনুমোদন, অফলাইনে ১০ লাখ এবং অনলাইনে ১ কোটি টাকা ব্যাংক জামানত রাখা, বার্ষিক আর্থিক বিবরণী প্রদানের শর্তে লাইসেন্স নবায়ন এবং বিভিন্ন প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনার ওপর কঠোর শর্ত আরোপ। এসব বিধান বাস্তবায়িত হলে দেশের পর্যটন শিল্পে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হবে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন সেগুলো প্রত্যাহার করার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

সংবাদ সম্মেলনে এস এন মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুব জানান, বিশ্বের সব দেশে ট্রাভেল এজেন্সির এজেন্ট টু এজেন্ট (বি টু বি) ব্যবসার প্রচলন রয়েছে। তবে এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে বি টু বি ব্যবসা বাংলাদেশে বন্ধ করা হচ্ছে। অর্থাৎ এক ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে অন্য ট্রাভেল এজেন্সির টিকিট ক্রয়-বিক্রি করতে পারবে না। বি টু বি বন্ধের ফলে সব ট্রাভেল এজেন্সিকে আয়াটা নিয়ে হবে যার খরচ প্রায় ৩০ লাখ টাকা। এর সঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর টিকেটের জন্য আরও অতিরিক্ত ২২ লাখ টাকা জমা দিতে হবে। ৯০ শতাংশ ট্রাভেল এজেন্সির এতো টাকা নাই। এর ফলে সব এজেন্সিগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকটি অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (OTA) শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করে মালিকরা বিদেশে পাড়ি জমালেও মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি বলেন, “আমরা পূর্বেই অনুরোধ করেছিলাম নীতিমালা না হওয়া পর্যন্ত OTA ব্যবসা স্থগিত রাখতে। কিন্তু তা না করায় প্রতারকরা নির্বিঘ্নে দেশ ছাড়তে পেরেছে, এবং এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”

তিনি অভিযোগ করেন, OTA জালিয়াতির ঘটনায় সাধারণ মানুষ ও ক্ষুদ্র ট্রাভেল এজেন্সিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মন্ত্রণালয় ব্যর্থতা আড়াল করতে এখন সাধারণ ট্রাভেল এজেন্সির ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, “সংসদে পাশ করা আইন পরিবর্তন করে নতুন অধ্যাদেশের মাধ্যমে কিছু বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এই অধ্যাদেশ জারি হলে দেশের বেশিরভাগ ট্রাভেল এজেন্ট ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হবে।”

তিনি বলেন, “আমরা চাই আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে সকলের স্বার্থ রক্ষায় সমাধান বের হোক। সরকার যেন হাজারো ট্রাভেল উদ্যোক্তা ও কর্মীর ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে না ঠেলে দেয়।”

সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন—“নতুন আইন যেন আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার হাতিয়ার না হয়ে যায়; বরং একটি সুষ্ঠু, টেকসই ও ন্যায্য ট্রাভেল শিল্প গড়ে তুলতে সহায়ক হয়।”