এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে ১০ হাজার ৪৭৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরিমাণের দিক থেকে এটি দুদকের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ দুর্নীতির মামলা।
রোববার (৯ নভেম্বর) এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান দুদকের জনসংযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. তানজির আহমেদ।
আসামিরা হলেন: এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, স্ত্রী ফারজানা পারভীন, ভাই সহিদুল আলম ও রাশেদুল আলম, এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন কর্মকর্তা, ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহবুব উল আলম ও মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ কায়সার আলী, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাহের আহমেদ চৌধুরীসহ সাবেক ও বর্তমান পরিচালক ও বিনিয়োগ কমিটির সদস্যরা।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৭ সালে ব্যাংকটি এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে আসার পর ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বিনিয়োগ কার্যক্রমে ব্যাপক অনিয়ম সংঘটিত হয়। ব্যাংকের আইটি সফটওয়্যার ‘টর্চ’-এ জালিয়াতি করে অনুমোদন ছাড়া ঋণসীমা বৃদ্ধি, মেয়াদ পরিবর্তন ও বিনিয়োগ অনুমোদন দেওয়া হয়।
২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ঋণসীমা ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা থেকে ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকায় উন্নীত করে, যা ব্যাংকের মূলধনের ৩৫ শতাংশেরও বেশি। এতে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ২৬ খ(১) ধারা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি সার্কুলার নং-০২/২০১৪ ও ১৬/২০১৮-এর একক ঋণগ্রহীতা সংক্রান্ত বিধান স্পষ্টভাবে লঙ্ঘিত হয়।
অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, এস আলম রিফাইন্ড সুগার, এস আলম স্টিলস ও এস আলম ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেডের অনুকূলে অপ্রতুল জামানত রেখে ঋণ অনুমোদন ও নবায়ন করা হয়। গ্রাহকের ব্যবসায়িক টার্নওভার, আয় ও পারফরম্যান্স সন্তোষজনক না থাকা সত্ত্বেও ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঋণ বৃদ্ধি অনুমোদন করেন।
এ ছাড়া, ব্যাংকের সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাহের আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে আইটি বিভাগে সফটওয়্যার ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা অনুমোদন বিহীনভাবে স্থানান্তর করা হয়। ১৩৪টি ডিলের মাধ্যমে আহসান এন্টারপ্রাইজ, ইউনিক ট্রেডার্স, এপারচার ট্রেডিং, আনসার এন্টারপ্রাইজসহ নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে টাকা স্থানান্তর করা হয়, যা পরবর্তীতে এস আলম গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যেমন গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশন, সোনালী ট্রেডার্স, এস এস পাওয়ারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করা হয়।
২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে স্থানান্তরিত ২৯০ কোটি টাকার সমপরিমাণ ২ কোটি ৩৫ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার সিঙ্গাপুরের ব্যাংক অব চায়না শাখায় এস এস পাওয়ার-১ লিমিটেডের অফশোর অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়, যা অর্থপাচারের স্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
এ ঘটনায় মোট ৬৭ জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৪০৯/৪০৬/১০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১২০(বি) ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।


